ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের ছোট খোঁচাবাড়ি গ্রামে অস্তিত্ব সংকটে দিন কাটাচ্ছে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের শেষ সাতটি পরিবার। একসময় এই গ্রাম ছিল সাঁওতালদের নিবিড় আবাসভূমি। তবে সময়ের সাথে সাথে নানা প্রতিকূলতায় হারিয়ে গেছে অধিকাংশ সাঁওতাল পরিবার। আর এখন যাঁরা টিকে আছেন, তাঁরাও ভূমিগ্রাসী চক্রের দখল ও অত্যাচারের শিকার হয়ে নিজের গ্রামেই পরবাসী হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় সাঁওতাল পরিবারের দুঃস্বপ্ন। প্রভাবশালী নুর ইসলাম ভান্ডারী ও তাঁর সহযোগীরা সাঁওতালদের জমি দখলের অপচেষ্টায় একের পর এক হুমকি ও হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা সাঁওতাল নারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছে।
সর্বশেষ, বৃহস্পতিবার সকালে ঘটে এক লজ্জাজনক ঘটনা। ওইদিন নুর ইসলাম ভান্ডারী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রকাশ্যে সাঁওতাল নারী লক্ষ্মী হাঁসদার শ্লীলতাহানি ঘটায় এবং তাঁর মেয়েকেও মারধর করে। এ ঘটনায় গোটা গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গ্রামের প্রবীণ সাঁওতাল নারী মেনোকা সরেন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "এই গ্রাম তো আমাদেরই ছিল। বাপ-দাদার ভিটায় আজ আমরা নিজেরাই অনাহুত অতিথি। প্রতিদিন ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।"
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার সেখানে একটি করাতকল স্থাপন করেছিল। কিন্তু সেই করাতকলই এখন তাদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিযুক্ত নুর ইসলাম ভান্ডারী করাতকলটি ভাড়া নিয়ে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ না করে উল্টো সাঁওতালদের ওপর দখলের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
মেনোকা সরেন বলেন, "ভাড়ার টাকা চাইতে গেলেই আমাদের হেনস্তা করা হয়। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। আজও আমার দিদির ওপর হামলা হয়েছে শুধু ভাড়ার টাকা চাওয়ায়।"
তবে নুর ইসলাম ভান্ডারী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "সাঁওতালরা নিজেদের বাড়িতে মদ বিক্রি করে। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম, তাই তারা এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।"
অপরদিকে, একের পর এক হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাঁওতালরা। তারা নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবি জানান। তবে ইউএনও কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় তাঁদের ফিরে যেতে হয়।
লক্ষ্মী হাঁসদা বলেন, "আমরা কোনো ভিক্ষা চাই না, শুধু নিজের জমিতে শান্তিতে বাঁচতে চাই। আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দিন।"
সাঁওতালদের অভিযোগ, তাঁরা বারবার স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও প্রতিকার পাননি। এ নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
সাঁওতাল পরিবারগুলোর দাবি, অবিলম্বে ভূমিগ্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।