ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব— রংপুরে ফরহাদ মজহার

আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব— রংপুরে ফরহাদ মজহার

রাজনীতিচিন্তক ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, “আমরা এমন একটি বিকেন্দ্রীকরণভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চাই, যেখানে রাষ্ট্র ও সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে এবং প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি জনগণের হাতে থাকবে। এভাবেই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব।”

বৃহস্পতিবার বিকেলে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভাববৈঠকি আয়োজিত 'গণঅভ্যুত্থান, রাষ্ট্রগঠন ও আমাদের দায়' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, “সাম্য, মানবিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা যে লড়াই করি, তা আমাদের নিজস্ব অভিপ্রায়ের ফল। কিন্তু আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। এই তিনটি মতাদর্শ একত্রে থাকলে তা হয়ে ওঠে ফ্যাসিবাদ। জার্মানিতে যেমন ছিল ‘জার্মান জাতীয়তাবাদ’, তেমনই বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’। এ ধরনের ফ্যাসিস্ট সংবিধান আমরা এখনও বাতিল করতে পারিনি।”

তিনি বলেন, “যখন তরুণ প্রজন্ম ৭২-এর সংবিধান বাতিলের কথা বলল, তখন তাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালানো হয় যে, তারা ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করে। কিন্তু এই প্রজন্ম কখনও মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করেনি, বরং তারা ৭১-এর প্রকৃত চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়।”

৫ আগস্টের প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, “এই তারিখ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। তরুণরা আমাদের নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। তাদের সাফল্য আমাদের সম্মিলিত সাফল্য, আর তাদের ব্যর্থতা আমাদেরও ব্যর্থতা।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই রংপুরবাসী নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিক। একটি কেন্দ্রীয় সরকার থাকবে ঠিকই, তবে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজধানীকেন্দ্রিক লুণ্ঠনের রাজনীতি আর চলতে দেওয়া যাবে না।”

আলোচনায় রুহানিয়াতের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “যে চেতনা মানুষকে নিজের জীবন বিসর্জনের জন্য প্রস্তুত করে তোলে, তাকে বলা হয় রুহানিয়াত। এটা কোনো ধর্মীয় সংগঠনের বিষয় নয় বরং সামষ্টিক মঙ্গলের জন্য আত্মত্যাগের অভিপ্রায়। এই রুহানিয়াত সমাজে থাকলে আমরা জ্ঞানের ভিত্তিতে একটি নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারব।”

তিনি বলেন, “শুধু শ্রমিকশ্রেণি নয়, বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন পেশাদার বিপ্লবী, যারা সামষ্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়নে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত।”

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমাদের দরকার একটি প্রকলেমেশন। কেউ যদি না দেয়, আমরা নিজেরাই দেব। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে। জুলাই বিপ্লব ব্যর্থ হলে, বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কবি ও রাজনীতিক চিনু কবির, লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, ভাববৈঠকির সংগঠক মোহাম্মদ রোমেল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রায়হান কবীর, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইলিয়াস প্রামাণিক এবং তিস্তা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন কনক রহমান।

ফরহাদ মজহার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত