ঢাকা মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুরে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে স্ত্রীর দীর্ঘদিন ভাতা উত্তোলন

চাঁদপুরে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে স্ত্রীর দীর্ঘদিন ভাতা উত্তোলন

চাঁদপুর শহরের মিশন রোড, চন্দনা রায়ের বাড়ির তৃতীয় তলায় (আশ্রমের পাশে) বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজন তালুকদার এখনো জীবিত, তবে সরকারি নথিপত্রে তিনি ‘মৃত’। এই ‘মৃত’ পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে তার স্ত্রী অসীমা তালুকদার দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে গত ৬ মে (মঙ্গলবার), যখন চিত্রলেখা মোড়ে অবস্থিত সোনালি ব্যাংক শাখায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়ে। ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহবুব আলম জানান, “আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী, সুজন তালুকদার মৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত। তার স্ত্রী নিয়মিতভাবে ভাতা উত্তোলন করছেন।” তিনি আরও জানান, ওই শাখা থেকে মোট ৩৯৫ জন মৃত মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশরা নিয়মিতভাবে ভাতা উত্তোলন করছেন।

সরকারি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম’-এও সুজন তালুকদারকে মৃত দেখানো হয়েছে। তার মুক্তিযোদ্ধা নম্বর: ০১১৩০০০১৬০২ এবং গেজেট নম্বর: ৫৫। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বর্তমানে জীবিত আছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সুজন তালুকদার যখন প্রবাসে ছিলেন, সেই সময় স্ত্রী অসীমা তালুকদার বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে স্বামীকে গৃহবন্দি করে রাখা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরকীয়া এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

ভাতিজি বিপাশা তালুকদার বলেন, “আমার কাকাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। সরকারি নথিতে তাকে মৃত দেখিয়ে তার নামে ভাতা তুলে নিচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে, সে কাকাকে সরিয়ে দিয়ে সম্পত্তি দখলের চেষ্টাও করছে।”

ঘটনার পর চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা বিনয় ভূষণ মজুমদার, আমিনুর রহমান ও বাসুদেব মজুমদার বলেন, “এটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা। জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় ভাতা আত্মসাৎ করাটা একটি ভয়ানক অপরাধ। আমরা দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, “অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবিলম্বে ভাতা বন্ধ করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্য-প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রয়োজনে তাদের পুরস্কৃতও করা হবে।”

অভিযুক্ত অসীমা তালুকদার দাবি করেন, তিনি শিগগির ঢাকায় যাচ্ছেন এবং স্বামী সুজন তালুকদারকে আত্মীয়দের জিম্মায় রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। তবে ভাতার টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে—সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক চাঁদপুর পালের বাজার শাখা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব সুজন তালুকদারের অ্যাকাউন্ট থেকে জমানো টাকা অসুস্থতার অজুহাতে চিকিৎসার নাম করে সকল প্রতিষ্ঠানের চোখে ধুলা দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নিচ্ছেন অসীমা তালুকদার। তিনি যেখানে সুজন তালুকদারকে মৃত দেখালে লাভ হবে সেখানে মৃত দেখাচ্ছেন যেখানে জীবিত দেখালে লাভ হবে সেখানে জীবিত দেখাচ্ছেন। এইভাবে উনি প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করেই চলেছে । মুক্তিযোদ্ধার সকল সম্পদ নিজ নামে কুক্ষিগত করে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে উধাও হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে অসীমা তালুকদার।

চাঁদপুর শহরে এই ঘটনা এখন আলোচনা ও ক্ষোভের কেন্দ্রে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, “একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার এমন অবমাননা শুধু আইনগত অপরাধ নয়, এটি জাতির সম্মান ও আত্মমর্যাদার বিরুদ্ধে এক জঘন্য অপমান। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ প্রতারণার পথ খুলে যাবে।”

ভাতা,উত্তোলন,মুক্তিযোদ্ধা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত