ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তাড়াইলে বিষমুক্ত সবজি চাষে সফল শেখ আলিউর

তাড়াইলে বিষমুক্ত সবজি চাষে সফল শেখ আলিউর

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে শেখ আলিউর রহমানের কীটনাশকমুক্ত লাউসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ এলাকায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গতকাল শুক্রবার উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল সদর ইউনিয়নের শামুকজানী গ্রামে গিয়ে জানা যায়, তাহের উদ্দিনের ছেলে শেখ আলিউর রহমান কীটনাশকবিহীন বিভিন্ন প্রকার নিরাপদ সবজি উৎপাদনে উদ্যোক্তা হয়ে ৫০ শতাংশ পতিত জমিতে চাষাবাদ করে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি পিতাপুত্র মিলে নির্বিষ সবজি উৎপাদনে সচেষ্ট। এলাকায় অন্যান্য কৃষকদের কাছে তিনি দিন দিন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠছেন। তার চোখে শুধু মাঠভরা সবুজ সবজিখেত। মানুষকে নির্বিষ ও নিরাপদ শাকসবজি খাওয়ানোই তার একমাত্র লক্ষ্য ও প্রচেষ্টা।

এলাকার সচেতন মহল বলেন, বাজারে সবজি-ফলমূলের মধ্যে কীটনাশক এখন নীরব ঘাতক হয়ে উঠেছে। কোনও উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই সবাইকে বাজারের সবজি-ফলমূল খেতে হচ্ছে। কিন্তু এসব ফল বা সবজিতে কীটনাশকের ব্যবহার কেমন তা কেউ জানে না। অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এসব ফল বা সবজি উপকারের বদলে মানুষের শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক ছড়ায়।

শেখ আলিউর রহমান বলেন, ২০ শতাংশ পতিত জমিতে ডায়না জাতের লাউ, ২০ শতাংশ জমিতে ঢ্যাঁড়শ এবং ১০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছি। দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমে বিভিন্ন প্রকারের কীটনাশকমুক্ত সবুজ সবজিখেত গড়ে তুলেছি।

তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগ থেকে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের কলাকৌশল শেখানোসহ সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছেন। তিনি লাউ, ঢ্যাঁড়শ, শিম, কচুরলতা, লেবু, পেঁপে, কাকরোল, চিচিঙ্গা, করল্লা, ধুন্দল, তিতাকরলা, কাঁকরোল, টম্যাটো, বেগুন ইত্যাদি সবজি ছাড়াও লেবুবাগান করছেন। লাউখেতের মাচায় দুলছে লাউয়ের ফল। তিনি আশা করছেন ৫-৬ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। সবজির পাশাপাশি পেয়ারা, কলা, কুল (বড়ই) চাষেরও পরিকল্পনা নিয়েছেন।

উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল সদর ইউনিয়নের শামুকজানী গ্রামের অসীম ভৌমিক বলেন, কয়েক বছরের পরিশ্রমে শেখ আলিউর রহমান সফলতা পেয়েছেন। এখন দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন উৎসুক লোকজন তাদের বিভিন্ন প্রকার সবজি বাগান দেখতে আসেন। তাদের সবজির কদর বেশি হওয়ার কারণ একটাই— নির্বিষ ও নিরাপদ সবজি। তারা বিষ বা ক্ষতিকর কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করেন না। রাসায়নিক সারের ব্যবহারও কম। জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে সহজেই পোকামাকড় দমন করা যায়, এখানে না এলে বিশ্বাস করতাম না।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, শেখ আলিউর রহমান নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য পেরোমোন, জৈব পদ্ধতি এবং জৈব সার ব্যবহার করেন। এই দুটি বালাই দমন পদ্ধতির কারণে কীটনাশক ছাড়া পোকামাকড় দমন করা সহজ হচ্ছে। জৈব পদ্ধতিতে খরচও কম। তার প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় লাউ। কীটনাশক ছাড়াও জৈব পদ্ধতিতে বালাই দমন করে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করা যায়, যা কৃষকরা শিখছেন।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিকাশ রায় বলেন, সফল তরুণ উদ্যোক্তা শেখ আলিউর রহমান আরও বেশি অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য প্রশিক্ষণে পাঠানোর উদ্যোগ রয়েছে কৃষি বিভাগের। বিষ বা কীটনাশক প্রয়োগ না করে জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপদ সবজি চাষের কলাকৌশল দেখে প্রতিবেশীরা উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। সরকার নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছে। এই অবস্থায় বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সফলতা সারা দেশের জন্য সুসংবাদ।

শেখ আলিউর,বিষমুক্ত সবজি চাষে সফল,তাড়াইল
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত