
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখন জীবন সায়াহ্নে। তাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, তাই কোনো বিভাজনও থাকা উচিত নয়। জীবনের এ পর্যায়ে এসে সমাজের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ গড়ে তোলার মাধ্যমে সন্তানেরা গর্ব করে জাতির সামনে তা তুলে ধরতে পারবে।
তিনি বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. ক. (অব.) মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন আহমেদ বীর উত্তমের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশে অনিবার্যভাবে নির্বাচন হবে। মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে প্রস্তুত। সবাই উৎসবমুখর নির্বাচন দেখতে চায়, ভোটের মাধ্যমে দেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে এবং নিজের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব অনেক। তাদের জাতির স্বার্থে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং নতুন প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে হবে।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে এখন বাঁধ খুলেছে, সবদিকে কলরব ও উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। এটি অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের উচিত সরকারকে সহযোগিতা করা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউনিট আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. তালুকদার মাহফুজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফাহিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহব্বত খান, প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের রেক্টর ইমাম হাসান রেজা, ভাইস প্রিন্সিপাল ফিরোজ আহমেদ এবং পরিবারের পক্ষে ভাই ডা. ফরহাদ, ছেলে জাবেদ ও জাহেদুর রহমান, মেয়ে ইফফাত জাহান।
বক্তারা স্মরণ করেন, লে. ক. জিয়া উদ্দিন আহমেদ ছিলেন তেজস্বী, নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ মানুষ। তবে মানুষের অধিকার ভূ-লুণ্ঠিত হলে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। তিনি একা রাস্তায় নেমে পড়েছেন, কারো রক্তচক্ষুকে ভয় পাননি।
মুক্তিযুদ্ধকালে লে. ক. জিয়া উদ্দিন ৩টি সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার পরও মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হতে দেখে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চালিয়েছেন, নিবন্ধ লিখে চাকরি হারিয়েছেন। পাকিস্তান সেনাঘাঁটি থেকে মেজর মঞ্জুর, মেজর তাহের ও মেজর পাটওয়ারীকে নিয়ে দেশমাতৃকার টানে ছুটে আসা এবং বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধের কাহিনী পাঠ্যপুস্তকে থাকা উচিত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।