ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গ্রামে নেই কোনো বিদ্যালয়: মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত স্থানীয়রা

গ্রামে নেই কোনো বিদ্যালয়: মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত স্থানীয়রা

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের বৃহত্তম গ্রাম উত্তর কুড়িমারায় এখনও কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রায় ৩০ হাজার জনসংখ্যার এই গ্রামটি প্রাথমিক শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই অনতিবিলম্বে এই গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন করে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও নিরক্ষর। শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশু শ্রম, নির্যাতন, মাদকাসক্তি ও বাল্যবিয়ের প্রবণতা। সরকারী শিক্ষা প্রকল্পের সুফল না পাওয়ার কারণে শতশত শিশু ও তাদের অভিভাবক চান, গ্রামের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হোক।

শিশুরা জানান, স্কুল না থাকায় দূরের বিদ্যালয়ে যেতে হয়। অনেককে রেললাইন ও ব্যস্ত সড়ক পার হতে হয়। দূরের স্কুল হওয়ায় নিয়মিত ক্লাস করা সম্ভব হয় না, ফলে অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে শিশু শ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে।

তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া বলেন, বর্ষায় কাঁদায় পা পিছলে পড়ে যাই। স্কুলে বসতে ভালো লাগে না। মা বলে না গেলে অসুবিধা নেই, বাঁচলেই তো হলো।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রায়হান জানান, আমার ছোট ভাইকেও নিয়ে যেতে হয়। বইয়ের ব্যাগ ও ওকে ধরে চলা খুব কষ্ট। বন্ধুদের অনেকেই এখন আর স্কুলে আসে না।

গ্রামে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় ভোটকেন্দ্রও নেই। তাই ভোটাররা সবসময় পাশের গ্রামে গিয়ে ভোট দিতে বাধ্য। অনেক বয়স্ক, নারী ও প্রতিবন্ধী ভোটার ভোট দিতে পারছেন না।

একজন প্রবীণ নারী ভোটার রিজিয়া খাতুন (৬৮) বলেন, আমার বয়স হয়েছে। ভোট দিতে পাশের গ্রামে যেতে পারি না। চোখে কম দেখি, রাস্তাও ভালো না। তিনটা নির্বাচনে আর ভোট দিই নাই।

দূরের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অত্যাধিক হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘ পথ পাড়ি, পরিবেশগত ঝুঁকি ও শিশুদের ক্লান্তি কারণে প্রাথমিক স্তরেই অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত অনুপস্থিত থাকে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এমদাদুল হক বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে জমিদাতা পাওয়া গেলে মহা পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক কফিল মাস্টার বলেন, শিক্ষা একটি জাতির মেরুদণ্ড। এখানে স্কুল না থাকায় এই প্রজন্ম মেরুদণ্ডহীন হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয় মানে শুধু বই পড়া নয়, সচেতনতা, মূল্যবোধ, অধিকার শেখারও মাধ্যম।

স্থানীয়রা অবিলম্বে উত্তর কুড়িমারায় কমপক্ষে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন এবং স্থায়ী ভোটকেন্দ্র নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। প্রয়োজনে বিদ্যালয়টি পরবর্তীতে কমিউনিটি সেন্টার ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

একটি গ্রামে বিদ্যালয় না থাকা কেবল শিক্ষা সংকট নয়; এটি নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি অবহেলার প্রতিচ্ছবি। সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিৎ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে এই প্রজন্ম শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়।

বঞ্চিত স্থানীয়রা,মৌলিক অধিকার,নেই কোনো বিদ্যালয়
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত