
বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার শেষে কক্সবাজারের টেকনাফে ফেরার পথে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ধাওয়ায় এক ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। তবে ট্রলারে থাকা ৭ জেলেকে উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুর দেড়টায় নাফনদীর মোহনায় শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকামের “গরা” এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাটের ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম।
উদ্ধার হওয়া জেলেরা হলেন, সুলতান আহমদ, নুর কবির, কবির আহমদ, আলী হোসেন, সোনা মিয়া গফুর আলম ও আব্দুল আমিন মাঝি।
সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, টেকনাফ সদরের নতুন পল্লানপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাশেমের মালিকানাধীন ট্রলার এটি। বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার শেষে টেকনাফে ফেরার সময় মিয়ানমারের আরাকান আর্মির ধাওয়ায় ট্রলারটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। এতে সাত জন জেলে ছিল। তারা জীবিত অবস্থা কূলে ফিরে আসতে পারলেও ট্রলারটি ডুবে গেছে। ট্রলারে থাকা কয়েক লাখ টাকার মাছ ও জালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভেসে গেছে।
ট্রলার মালিকের বরাত দিয়ে আবুল কালাম বলেন, গত শুক্রবার সকালে টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়াপাড়া ঘাট থেকে সাতজন মাঝিমাল্লাসহ ট্রলারটি সেন্টমার্টিন দ্বীপে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরতে যায়। বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক লাখ টাকার মাছ জালে ধরা পড়ে। সেগুলো নিয়ে টেকনাফে আসার পথে আজ সোমবার দুপুরের দিকে টেকনাফ-সেন্টমাটিন নৌপথের “নাইক্ষ্যংদিয়া নামক এলাকায় পৌঁছালে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা স্পিডবোট যোগে তার ট্রলারটিকে ধাওয়া করেন।এসময় ট্রলারের মাঝি ট্রলারটি দ্রুতগতিতে চালিয়ে নাফনদীর মোহনা শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকামের “গরায়” উঠিয়ে দেন। ট্রলারটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। মাছ, জাল ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভেসে গেছে। জেলেরা সাতরিয়ে কুলে ফিরে আসতে সক্ষম হলেও ট্রলারটি ডুবে গেছে।
ট্রলার মালিক মোহাম্মদ হাশেম বলেন, আরাকান আর্মির ধাওয়ায় ট্রলারটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। মাছ, জাল ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভেসে গেছে। ট্রলারটি ডুবে রয়েছে। ট্রলারটি বালুতে ঢুকে যাবার পাশাপাশি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ভেঙ্গে যেতে পারে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আরাকান আর্মির ধাওয়ায় এবার মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।
এর আগে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি মাছ ধরার ট্রলারসহ বাংলাদেশি ৭ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।
বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ শিকার শেষে টেকনাফে ফেরার পথে শাহপরীর দ্বীপের নাইক্ষ্যংদিয়া নামক নাফনদীর মোহনা থেকে এদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাটে ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম।
তিনি বলেন, ট্রলারটির মালিক টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মোনাফের ছেলে উমর ছিদ্দিকের মালিকানাধীন। মাছ ধরার ট্রলারটিতে সাত জন মাঝিমাল্লা ছিলেন।
এ নিয়ে গত ২০ দিনে ৪০ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে রবিবার দুটি ট্রলার সহ আরও ১৪ জেলে, শনিবার একটি ট্রলার সহ ১২ জেলে, ১২ আগস্ট ট্রলার সহ ৫ জেলে এবং ৫ আগস্ট বিহিঙ্গি জাল ও নৌকাসহ ২ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আজ এই পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ২৪৪ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।