
লালমনিরহাটে হালকা মৃদু বাতাসে যেন দুলছে চাষীদের স্বপ্ন শিমের গাছে গাছে। ছোট্ট ছোট্ট ফুল আর থোকায় থোকায় শিমে ভরে উঠেছে দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার সবজি চাষীদের শিম বাগান। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে শিমের। সবজি হিসেবে শিমের কদর বেশি। হাট-বাজারে আগাম শিমের চাহিদা প্রচুর হওয়ায় মুনাফাও বেশি পাচ্ছে চাষীরা।
বছর জুড়েই লালমনিরহাটের অধিকাংশ কৃষি জমিতে রকমারি সবজি চাষ হয়। এ জেলার উঁচু জমিতে চাষীরা বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতিমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে সবজির।
লালমনিরহাটের সবজি স্থানীয় হাট-বাজারের চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিন ওই সব গ্রাম থেকে হাজার হাজার মন সবজি দেশের বিভিন্ন বড় পাইকারি বাজারে চলে যায়। এসব গ্রামের চাষিরা সবজি চাষে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তন্মধ্যে সবজির অন্যতম হচ্ছে শিম।
স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পেতে শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন জেলার চাষিরা। আগাম শিমের কদর বেড়ে হাট-বাজারে দাম বেশি থাকায় ভালো মুনাফা পাচ্ছেন তারা। বর্তমানে চাষিদের ক্ষেতেই প্রতি কেজি শিম ১২০–১৩০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা চাষীদের ক্ষেত থেকে নগদ অর্থে শিম কিনে জেলা ও দেশের বিভিন্ন পাইকারী বাজারে পাঠাচ্ছেন।
এ মৌসুমে সবজি উৎপাদনকে ঘিরে নানামুখি ব্যবসা চালু হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে দিনমজুরদের মজুরি, অটো-ভ্যানসহ ছোট যানবাহনের চাহিদা। সব মিলে সবজিকে ঘিরে জেলার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
লালমনিরহাটের সবজি খ্যাত গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে—শিয়ালখাওয়া, চাঁপারহাট, ভোটমারী, দৈখাওয়া, সিঙ্গিমারী, কুমড়িরহাট, চন্দনপাট, বড়কমলাবাড়ী, হাজীগঞ্জ, চণ্ডীমারি, কর্ণপুর, দুড়াকুটি, ফুলগাছ, কোদালখাতা, ভাটিবাড়ী, কাকেয়া টেপা, বনগ্রাম, শিবেরকুটি।
এসব সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমড়িরহাট ও সদর উপজেলার বড়বাড়ীহাটের মাঠে ও গোশালা বাজারে প্রতিদিন সকালে বিশাল পাইকারি বাজার বসে।
শিম চাষীরা জানান, অল্প জমি, স্বল্প পুঁজি ও একটু পরিচর্যা করেই উঁচু জমিতে শিম চাষ করে ভালো মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। আষাঢ় মাসের শেষ দিকে সারি বদ্ধভাবে গর্ত খুড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়। এরপর পরিচর্যা, সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চারা বড় হলে মাচাং বানিয়ে দিলে মাত্র আড়াই–তিন মাসে শিম বাজারে পাঠানো সম্ভব।
লালমনিরহাটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব বলেন, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।