
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে নিখোঁজের পর তিন বছরের শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত চাচি সাথী আক্তারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা।
শিশুর বাবা রুবেল পাটওয়ারী সাথী আক্তারকে (২০) আসামি করে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় , উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের পানচাইল গ্রামের পাটওয়ারী বাগির ট্রাক চালক রুবেল পাটওয়ারীর শিশু সন্তান তাসনুহা তাবাসসুম ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে নিখোঁজ হয়।
পরিবারের সদস্যরা তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। বাড়ির কোথাও খুঁজে না পেয়ে এক পর্যায়ে বাড়ির পুকুরে ডুবুরি দল নামিয়ে তল্লাশি করে। তাতেও না পেয়ে পরবর্তীতে পুকুরে জাল ফেলে ও শিশু তাসনূহাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার রাত ১২টার দিকে বাড়ির লোকজন পুকুরে বস্তাবন্দি কিছু ভাসতে দেখে বস্তাটি উপরে তোলে। তাতে শিশুর মরদেহ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়।
খবর পেয়ে শাহরাস্তি থানা পুলিশ শিশুর মৃতদেহটি উদ্ধার করে। এর পর পুলিশ ও এলাকাবাসী তল্লাশি চালিয়ে শিশুটির চাচার ঘরের বিভিন্ন স্থানে রক্তের চিহ্ন দেখতে পায়।
এ সময় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাচা রিপন পাটওয়ারী ও চাচী সাথী আক্তারকে আটক করে।স্থানীয় ইউপি সদস্য মাওলানা আমিনুল হক জানান, আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ঘর তল্লাশি করতে বলি। তখন পুলিশ শিশুটির চাচার ঘর তল্লাশি করে কিছু আলামত দেখতে পায়। পরে সাথী আক্তার ও তার স্বামী রিপনকে আটক করলে চাচী পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয় সে শিশু তাসনুহা তাবাসসুমকে হত্যা করেছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, শিশু তাসনূহা বুধবার সকাল ১০টার দিকে পাশেই তার চাচা রিপনের ঘরে চাচাতো ভাইদের সাথে খেলতে যায়। এক পর্যায় তার চাচি সাথী ভাতের মাড় গালতে গিয়ে ওই গরম মাড় ছিটকে তাসনুহার শরীরে এসে পড়লে তার শরীর ঝলসে যায়। এক পর্যায়ে তাসনুহা চিৎকার করে করে উঠে। তখন চাচি সাথী আক্তার চিৎকার যেন অন্য কেউ শুনতে না পায় সেজন্য তার মুখ এবং গলাচেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। এরপর তাসনুহার মরদেহ কম্বলে পেঁচিয়ে ঘরের আলমিরাতে রাখে। পরে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আলমারি থেকে নিয়ে ঘরের উপরে সিলিং (কাড়) এর উপরে বস্তা বেঁধে একটা বড় পাতিলে রাখে।
সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকলে সাথী আক্তারের স্বামী রিপন সিলিং এর উপরে উঠে দেখে ভাতিজির লাশ ওই পাত্রে। পরে এই কথা সে তার বড় ভাবী রোজি আক্তারকে বলতে গেলে ওই ভাবী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে সাথী আক্তার সুকৌশলে ঘরের সিলিং থেকে বস্তাবন্দি তাসনুহার লাশটি সরিয়ে তার ঘরের পেছনে পুকুরে বস্তা বন্দি অবস্থায় ফেলে দেয়। পরে ওই পুকুর থেকেই বাড়ির লোকজন শিশু তাসনুহার লাশ উদ্ধার করে।
তাসনুহার বাবা রুবেল পাটওয়ারী জানান, আমাদের একমাত্র আদরের মেয়ে তাসনুহা তাবাসসুমকে হারাইয়া কি কইরা থাকমু ভাই? আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার জানান, শিশুটি বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের সদস্যরা ডুবুরি দিয়ে পুকুরে অভিযান চালিয়েও শিশু তাসনুহা তাবাসসুমকে পাওয়া যায়নি।
ওসি আরো জানান, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামি সাথী আক্তারকে চাঁদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।