ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাটকেলঘাটায় সুনাম ছড়াচ্ছে নৌকা, বাড়ছে কর্মসংস্থান

পাটকেলঘাটায় সুনাম ছড়াচ্ছে নৌকা, বাড়ছে কর্মসংস্থান

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার একটি কারখানায় নৌকা তৈরি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর বাড়তি পানি ও জলাবদ্ধতার কারণে সাতক্ষীরার কিছু কিছু এলাকা বছরে ছয় মাসেরও বেশি সময় জলমগ্ন থাকে। ফলে চলাফেরার জন্য দেশের দক্ষিণের এ জনপদে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নৌকার ব্যবহার।

স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতেই জেলার পাটকেলঘাটায় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের পাশে গত ১০ বছরে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি নৌকা তৈরির কারখানা। দিন-রাত কর্মব্যস্ততায় মুখর থাকে কারখানাগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কেউ বসে নেই। কেউ কাঠ কাটছেন, কেউ নৌকার দাড়া (কাঠামো) তৈরি করছেন, কেউ কাঠ জোড়া লাগাচ্ছেন, কেউবা মেশিন দিয়ে ফিনিশিংয়ের কাজ করছেন, কেউ আবার নৌকার গায়ে আলকাতরা লাগাচ্ছেন। যে যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কারো। এসব কারখানা থেকে প্রতিবছর দুই হাজারেরও বেশি নৌকা বিক্রি হয়।

আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র এই তিন মাস নৌকা ব্যবহারের মৌসুম বলা হলেও জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় সারা বছরই এখানে নৌকা তৈরি ও বেচাকেনা চলে। এখানকার তৈরি নৌকা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ হচ্ছে। নৌকার চাহিদা ও কারখানা সম্প্রসারণের সাথে সাথে স্থানীয় বহু মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে এ শিল্পকে ঘিরে।

একেকটি নৌকা তৈরিতে কারিগরদের দুই থেকে তিন দিন লাগে। এসব নৌকাই সারাদেশে বিশেষভাবে পরিচিত করে তুলেছে পাটকেলঘাটাকে। সারাবছর নৌকা তৈরি হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা ও কদর বাড়ে কয়েক গুণ। সেসময় কারিগরদের কর্মব্যস্ততাও বাড়ে।

স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়ক ধরে যেতে পাটকেলঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তার দুই ধারে কয়েক যুগ আগে গড়ে ওঠে সুমি ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, তৈয়াবা ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, রহমান ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, আল ইমরান ফার্নিচার অ্যান্ড নৌকা কারখানা, রফিক নৌকার কারখানা, ঐশী নৌকা কারখানাসহ প্রায় ২০টি নৌকা তৈরির কারখানা।

এসব কারখানা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাটকেলঘাটায় ট্রলার, পাল তোলা নৌকা, কোষা কিংবা ডিঙি—সব ধরনের নৌকাই তৈরি হয়। আকার-আকৃতি অনুযায়ী এসব নৌকার মূল্য ১০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এখানে তৈরি নৌকা জেলার চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। অনেকে এসে রেডিমেড নৌকা কিনে নিয়ে যান। আবার অনেকে নিজেদের পছন্দমতো অর্ডার দিয়ে তৈরি করিয়ে নেন।

এসব নৌকা তৈরিতে মেহগনি, খৈ ও চম্বল কাঠ ব্যবহার করা হয়। মাঝারি আকারের একটি নৌকা বানাতে দুই জন কারিগরের দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।

স্থানীয় নৌকা তৈরির কারখানা মালিক মো. শাহিনুর আলম বলেন, ‘কাঠ ও অন্যান্য উপকরণের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কারিগরদের মজুরিও। এতে নৌকা উৎপাদনের খরচও আগের তুলনায় বেড়েছে। এজন্য কিছুটা বাড়তি দামেই নৌকা বিক্রি করতে হয়।’

পাটকেলঘাটা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ সরদার বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাটকেলঘাটার নৌকার সুনামকে কাজে লাগিয়ে এ শিল্পে আরো বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব।’

তিনি আরো বলেন, ‘নৌকার জন্য প্রসিদ্ধ সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা। এ শিল্পকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। সরকার একটু নজর দিলে এ শিল্পের সম্প্রসারণ সম্ভব। যা কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও বয়ে আনবে।’

সাতক্ষীরা বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক গৌরব দাস বলেন, ‘সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় যারা নৌকা নিয়ে কাজ করেন, তাদের কারখানা আমরা বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করেছি। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় বিসিক থেকে যে ঋণের সুবিধা রয়েছে, আমরা সেই ঋণ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করতে পারি।’

বাড়ছে কর্মসংস্থান,সুনাম ছড়াচ্ছে নৌকা,পাটকেলঘাটা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত