
শেরপুরের নকলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার পাটের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক বছরের তুলনায় বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় পাট চাষিরা খুশি। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক চাষীদের প্রশিক্ষণ ও সার্বিক পরামর্শ দেওয়ায় কারণে এবার পাটের তেমন কোনো রোগবালাই হয়নি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে উপজেলায় মোট ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় ৯৯০ একর জমিতে কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে পাট চাষ করানো হয়।
উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তাহমিনা ইয়াসমিন জানান, এ বছর উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে পাট চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি কৃষককে এক কেজি করে বিজেআরআই-৮ তোষা পাটের বীজ এবং প্রতিজনকে ১২ কেজি করে বিভিন্ন রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টি, সহজপ্রাপ্য মজুরি ও পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার লাভবান হবেন। আগামীতে পাঠ চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়বে বলে আশা ব্যক্ত করেন এই পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা।
সরেজমিনে উপজেলার মোছারচর, বানেশ্বরদী, বাছুরআলগা, নারায়নখোলা, পাঠাকাটা ও ভূরদীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব এলাকার পাট চাষীরা পাটখড়ি থেকে সোনালী আঁশ খ্যাত পাট ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। তাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
বানেশ্বরদী গ্রামের আলী হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন, মোজার বাজার এলাকার আরিফ হোসেন, জালালাপুর এলাকার কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন চাষির সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাটের বাজারে দরপতন, চাষীরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকরা পাট চাষের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে দিন দিন পাটের আবাদ কমছে।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছায়েদুল হক জানান, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, শ্রমিক স্বল্পতা ও মজুরি বেশি, জাগ দেওয়ার পানির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন পাট চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ ক্রমেই কমছে। কোনো একসময় এ দেশের উৎপাদিত পাট সোনালী আঁশ হিসেবে বিশ্বব্যাপি খ্যাতি ছিল। বিভিন্ন কারণে আজ এই সোনালী আঁশের দুর্দিন চলছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একান্ত প্রচেষ্ঠায় আবারো এই সোনালী আঁশের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন। তবে ন্যায্যমূল্যের ব্যাপারে সরকারের সুনজর কামনা করছেন স্থানীয় অনেক কৃষক।
অনেকে জানান, কৃষকরা পাট চাষ ছেড়ে শাকসবজিসহ অন্যান্য কৃষি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ না করায় পাটের আবাদ কমার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ বলে মন্তব্য করেন তারা। যদিও অনেকে জানান, কৃষি প্রণোদনা দেওয়ায় উপজেলায় দিন দিন পাটের আবাদ বাড়ছে। তবে বিভিন্ন তথ্য মতে, উপজেলায় পাট আবাদের পরিমাণ গত কয়েক বছর ধরেই এক প্রকার স্থির রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুনসালীন মেহেদী জানান, অল্প ব্যয়ে স্বল্প শ্রমে কম সময়ে বেশি লাভের আশায় উপজেলার অনেক কৃষক ধানসহ অন্যান্য আবাদের পাশাপাশি পাট চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর উপজেলায় মোট ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে তোষা জাতের পাট ৪২০ হেক্টরে, দেশী জাতের পাট ৪৫ হেক্টর, মেস্তা জাতের পাট ২২ হেক্টর ও কেনাফ পাট ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন কৃষক। উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, টালকী, পাঠাকাটা ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের কৃষকরা বরাবরের মতো এবারো পাটের আবাদ বেশি করেছেন। তবে পৌরসভা, গনপদ্দী, নকলা, উরফা ও গৌড়দ্বার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পাট চাষের উপযোগী জমিতে বিভিন্ন জাতের পাটের আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান। পাটের বাম্পার ফলন হওয়ায় নকলার কৃষকেরা এখন সোনালি আঁশের সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন বলে জানান কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুনসালীন মেহেদী।