
মুন্সীগঞ্জে আলু বিক্রিতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না আগের মতো। দেশের অন্যতম বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী এ জেলায় সরকার নির্ধারিত ২২ টাকা দরে আলু বিক্রি হচ্ছে না। হিমাগারগুলোতে কমেছে আলুর ক্রয়-বিক্রয়, ফলে কৃষক ও পাইকার উভয়ই লোকসানের শঙ্কায় হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী জেলার সচল হিমাগারগুলোতে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকরা দেশের বাইরে আলু রপ্তানির ওপর জোর দিচ্ছেন।
পাইকাররা বলছেন, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী দাম না থাকায় সরকারের নির্ধারিত দামে আলু কেনাবেচা সম্ভব হচ্ছে না। হিমাগার কর্তৃপক্ষের দাবি, পর্যাপ্ত আলু মজুদ থাকলেও সরকারি দামে বাজারজাত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। খুচরা বাজারেও সরকারের বেঁধে দেওয়া ২২ টাকা দরে কোনো প্রভাব পড়েনি। জেলার সর্বত্র এখনো আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২০ টাকায়, আর হিমাগার থেকে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২–১৪ টাকায়। ফলে লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকরা হিমাগারে মজুদ আলু ছাড়ছেন না।
জেলার ৬টি উপজেলায় ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এ থেকে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন আলু, যা গত বছরের তুলনায় ৫২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। জেলার ৭৪টি হিমাগারের মধ্যে সচল রয়েছে ৫৮টি, যেগুলোর ধারণক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিক টন। এতে উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কৃষক বাড়ির মাচায় আলু সংরক্ষণ করছেন।
কৃষকরা জানান, এ বছর এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে ১৬–১৮ টাকা। পরিবহন, শ্রমিক মজুরি ও হিমাগার ভাড়া যোগ করলে খরচ দাঁড়াচ্ছে ২৬–২৮ টাকায়। গত বছর ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি হিমাগার ভাড়া ছিল ২১০–২৫০ টাকা, এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ টাকায়। ফলে নির্ধারিত দরে বিক্রি করলে কৃষকের লোকসান অনিবার্য।
হিমাগার মালিকরা বলছেন, শুধু দাম বেঁধে দিলেই বা সরকার কিছু আলু কিনে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। টেকসই সমাধানের জন্য রপ্তানির বিকল্প নেই। জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, দেশের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। হিমাগারের বাইরে থাকা আলু খেতে খেতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি চলে আসবে, আর মার্চে বাজারে আসবে নতুন আলু। তাই লোকসান কাটাতে রপ্তানিই একমাত্র উপায়।
জাতীয় সংস্কার পার্টির চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরও বলেন, আলু চাষিদের বাঁচাতে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে রপ্তানির ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমানে বিপুল পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুদ থেকে কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, গত বছর দেশে ১ কোটি ৬ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ মেট্রিক টন, অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন বেশি। অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণেই সারা দেশে আলুর দামে প্রভাব পড়েছে।