ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হোসেনপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

হোসেনপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার ৩৮নং ধনকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবন বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ ভবনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ভবনের দেয়াল, ছাদ ও পলেস্তারা এতটাই নষ্ট হয়ে গেছে যে, বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনো সময়। তাই জরুরি ভিত্তিতে স্কুল ভবনটি সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা।

সরেজমিনে বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, ভবনজুড়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা প্রায়ই খসে পড়ে, দেয়ালের প্লাস্টার উঠে গেছে বহু জায়গায়। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে চুইয়ে পড়ে পানি, ফলে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ হয়ে ওঠে ভয়াবহ। এ অবস্থায় প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যেই চলছে পাঠদান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে ভয় কাজ করছে—যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এক শিফটে পরিচালিত এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ২২০ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা এই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তাদের শিক্ষালাভ এখন সম্পূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে বসে থাকে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাউজিয়া আবিদা সাওদা জানায়, “আমাদের ক্লাসের ছাদে বড় ফাটল আছে। মাঝে মাঝে পলেস্তারা পড়ে মাথার কাছে। ভয় লাগে, তবুও স্কুলে আসি কারণ পড়াশোনা না করলে পিছিয়ে যাব।”

একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলে, “বৃষ্টি হলে আমাদের ক্লাসে পানি পড়ে। তখন বেঞ্চ টেনে নিয়ে বসতে হয়। শিক্ষকরা বলেন সাবধানে থাকতে, কিন্তু ভয় তো থেকেই যায়। তবুও স্কুল ভালো লাগে, কারণ এখানে আমরা সবাই একসাথে পড়ি।”

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই ক্লাস নিতে হয়। ভবনের ছাদে নতুন ফাটল দেখা দিয়েছে, কোথাও কোথাও ইট খসে পড়ছে। শিশুরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে—এটাই এখন তাদের একমাত্র প্রত্যাশা।

অভিভাবক জিন্নাত আক্তার বলেন, “আমার সন্তান প্রতিদিন ভয় নিয়ে স্কুলে যায়। সকালে ওকে পাঠানোর সময় মনে ভয় হয়, কখন কী ঘটে! আমরা চাই সরকার দ্রুত একটি নিরাপদ ভবন তৈরি করে দিক।”

সহকারী শিক্ষক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, “বিদ্যালয়ের ভবনটির অবস্থা ভয়াবহ। দুটি ভবন থাকলেও এক শিফট হওয়ায় সব শ্রেণিকক্ষই ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিনই ভয় নিয়ে ক্লাস নিতে হয়। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় নেবে কে—তা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় থাকি। তবুও শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে রাখতে ঝুঁকি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।”

প্রধান শিক্ষক ছালমা ইয়াসমিন জানান, “ভবনের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে। ১৯৬৯ সালে নির্মিত ভবনটির কখনো সংস্কার হয়নি। এখন এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।”

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক বলেন, “শীঘ্রই আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাব। নতুন প্রকল্পে এর ভবনের প্রস্তাব পাঠানো হবে। আশা করছি বরাদ্দ পেয়ে দ্রুতই নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।”

চলছে পাঠদান,ঝুঁকিপূর্ণ ভবন,হোসেনপুর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত