
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পথ্য (সরকারি বরাদ্দের খাবার) সরবরাহের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন জীবননগর দৌলতগঞ্জ এলাকার এন এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মানিক মিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৪ আগস্ট জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০২৫–২৬ অর্থবছরের পথ্য (সরকারি বরাদ্দের খাবার) সরবরাহের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যার দরপত্র আইডি নং ১১৩৭০৫৯। আমরা নিয়ম মেনে ৭ সেপ্টেম্বর দরপত্র জমা দিই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমরাসহ আরও চারজন দরপত্র জমা দিয়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনেই তা উন্মুক্ত করা হয়।
দরপত্র উন্মুক্ত হওয়ার পর জানা যায়, অনন্যা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৩১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৬ টাকার দরপত্র জমা দিয়ে প্রথম হয়ে পথ্য কাজটি পেয়েছে। তবে এই অনন্যা প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে এবং তারা জালিয়াতি করে দরপত্র জমা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও দাবি করেন, অনন্যা এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া সনদ জমা দিয়েছে। তারা দারুল ইলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার একটি অভিজ্ঞতা সনদপত্র সংযুক্ত করেছে, কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ ধরনের কোনো সনদপত্র দেয়নি। দারুল উলুম হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি সালাউদ্দীন গত ৪ অক্টোবর লিখিতভাবে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানান।
লিখিতভাবে তিনি স্পষ্ট করেন, “বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারলাম যে, আপনার দপ্তরের টেন্ডার আইডি নং ১১৩৭০৫৯-এর বিপরীতে ২০২৫–২৬ সালের পথ্য সরবরাহের জন্য জীবননগরের অনন্যা এন্টারপ্রাইজ একটি অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করেছে। আমি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে জানাচ্ছি, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে খাবার সরবরাহের কোনো সনদ দেয়নি। আমাদের প্রতিষ্ঠান টাকার বিনিময়ে খাবার সরবরাহ করে না, তাই এ ধরনের সনদ প্রদান সম্ভব নয়।”
মানিক মিয়া বলেন, ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দাখিলের বিষয়ে লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানোর পরও জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এরই মধ্যে জানা গেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই অনন্যা এন্টারপ্রাইজকে পথ্য খাবার সরবরাহের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। যা স্পষ্টতই অন্যায়। অভিজ্ঞতার মতো গুরুত্বপূর্ণ সনদ জাল করে নকল তথা ভুয়া সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি সরকারি পথ্য খাবারের দায়িত্ব পায়, তা একদিকে আইনের লঙ্ঘন, অন্যদিকে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার পৌঁছানোও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, আইন অনুযায়ী ভুয়া সনদপত্র দাখিল প্রতারণামূলক অপরাধ। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা, দরপত্র বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত এবং দণ্ডবিধি অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়েরের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া যায়। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে অনুরোধ করছি, আইন অনুযায়ী জালিয়াতিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এই দরপত্র বাতিল অথবা পরবর্তী দরপত্রদাতাকে কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে আমরা আইনের আশ্রয় নেব।