ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঈশ্বরদীতে কৃত্রিম প্রজননের অগ্রগতি ও মূল্যায়ন সভা

ঈশ্বরদীতে কৃত্রিম প্রজননের অগ্রগতি ও মূল্যায়ন সভা

পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে পাবনা–সিরাজগঞ্জ জেলার উপ-সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, এফ এ (এআই) এবং এআইটি দের সঙ্গে কৃত্রিম প্রজনন কাজের অগ্রগতি ও কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ক মূল্যায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দিনব্যাপী ঈশ্বরদীতে অবস্থিত সুগার ক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে (পাবনা–সিরাজগঞ্জ) জেলা মিলে কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের (পয়েন্টের) কৃত্রিম প্রজনন কাজের অগ্রগতি বিষয়ক মূল্যায়ন সভা পাবনা জেলার কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক ডা. মো. আবু রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

এ মূল্যায়ন সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিবিদ মো. শাহজামান খান (তুহিন), পরিচালক, কৃত্রিম প্রজনন দপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডা. মেহেদী হাসান ভূঁইয়া, উপপরিচালক, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, ঢাকা; ডা. জহুরুল ইসলাম, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, পাবনা; কৃষিবিদ আকলিমা খাতুন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ঈশ্বরদী; মো. নাজমুল হোসাইন, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আটঘরিয়া, পাবনা এবং কৃষিবিদ ড. মো. সফিকুর রহমান (শশী), প্রকল্প পরিচালক, দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রুভেন বুল তৈরি প্রকল্প এবং উপপরিচালক, কৃত্রিম প্রজনন দপ্তর, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

সমগ্র মূল্যায়ন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পাবনা জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ আদনান ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্জন ডা. মো. ফারুক হোসেনসহ জেলার উপ-সহকারী প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, এফ এ (এআই) এবং এআইটি বৃন্দ।

এই মূল্যায়ন সভায় পাবনা–সিরাজগঞ্জ জেলায় ২৪০টি কৃত্রিম প্রজনন পয়েন্টের মধ্যে সর্বোচ্চ কৃত্রিম প্রজনন করায় ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি পয়েন্টের নুরুল ইসলাম প্রথম স্থান, ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার–ভাঙ্গুড়া পয়েন্টের নায়েব আলী দ্বিতীয় স্থান এবং পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া কেন্দ্রের রেজাউল করিম তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

পরে কর্মকর্তারা ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে অবস্থিত অর্গানিক কৃষি, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য উৎপাদন, কৃষির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মানবিক উন্নয়নের এক অনন্য বিস্তৃত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উবিনীগ’-এর কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন টিম জানান, “আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) একটি ভিন্ন রকমের দিন কাটালাম—অভিজ্ঞতায় ভরপুর, অনুভবে সমৃদ্ধ এবং দেশের মাটি, মানুষ, সংস্কৃতি ও কৃষিকে নতুনভাবে দেখার এক অনন্য সুযোগ।”

উবিনীগ কেন্দ্র পরিদর্শন আমাদের শুধু কৃষি নয়, বাংলাদেশের সংস্কৃতি, নৈতিকতা, মানুষের চরিত্র, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে ওঠার ভিত—সবকিছুকেই নতুন করে দেখতে শিখিয়েছে। এই পরিদর্শনের প্রতিটি পর্ব আরও অর্থবহ হয়েছে। কারণ কৃষি, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে উবিনীগ এক অনন্য প্রতিষ্ঠান।

উবিনীগ কেবল একটি এনজিও নয়—একটি দর্শন, একটি চেতনা এবং একটি মানবিক আন্দোলন। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জনাব ফরিদা আক্তার, মাননীয় উপদেষ্টা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়—বাংলাদেশে বিকল্প কৃষি, বিষমুক্ত খাদ্য ও মানবিক কৃষি আন্দোলনের পথিকৃৎ। তার সহযাত্রী আজমিরী খাতুন গত ১৮ বছর ধরে এই আন্দোলনকে বাস্তবে রূপ দিতে নিরলস পরিশ্রম করছেন।

তাদের কাজের বিশেষত্ব হলো—কৃষিকে শুধু উৎপাদন হিসেবে না দেখে কৃষিকে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, নৈতিকতা ও মানবিকতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা। উবিনীগ বিশ্বাস করে—“কৃষি হলো মানুষের সংস্কৃতি, মানুষের ভাষা, মানুষের পরিচয়।”

উবিনীগের সাংস্কৃতিক বিপ্লব

এই পরিদর্শনের সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী অংশ ছিল উবিনীগের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এখানে শুধু কৃষি শেখানো হয় না— নতুন প্রজন্মকে গান শেখানো হয়, সঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষ গড়ে তোলা হয়, সাংস্কৃতিক মনন তৈরি করা হয়।

তারা বিশ্বাস করে—একটি শিশু গান শিখলে মানবিক হয়, গান তাকে মাটির সঙ্গে যুক্ত রাখে, সঙ্গীত তাকে সমাজ, প্রকৃতি ও দেশের প্রতি দায়িত্বশীল করে। প্রত্যন্ত গ্রামে এমন প্রতিষ্ঠান খুব কমই দেখা যায়—যেখানে কৃষি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, সংস্কৃতি ও মানবিকতা সবকিছুকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়।

নতুন প্রজন্মকে সঙ্গীত, নৈতিকতা ও মানবিকতার মাধ্যমে দেশের প্রকৃত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উবিনীগ একটি অনন্য দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছে।

তারা আরও বলেন, পরিদর্শনে সাংস্কৃতিক পরিবেশ, গান শেখানোর মানসিকতা এবং গ্রামবাংলার সংস্কৃতিচর্চা দেখে বিশেষ আনন্দ অনুভূত হয়েছে। আজকের অভিজ্ঞতা সেই সাংস্কৃতিক চর্চাকে আরও উজ্জ্বল ও দৃঢ় করেছে। আমরা বুঝলাম—কৃষি, সংস্কৃতি ও সঙ্গীত—এই তিনটি বিষয় আলাদা নয়; এগুলো মিলেই তৈরি করে বাংলাদেশের মাটি, মন, মানুষ ও আত্মা।

অর্গানিক ও নয়া কৃষি আন্দোলন—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মাটিতে পুঁতে রাখা এক বীজ

নয়া কৃষি আন্দোলনে দেখা মিললো স্থানীয় বীজ, স্থানীয় জাত, জৈব সার, প্রাকৃতিক খাদ্য, মাছ–গরু–ছাগল–পোলট্রি একীকরণ—রাসায়নিকবিহীন উৎপাদন, পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি পূর্ণাঙ্গ জীববৈচিত্র্যময় কৃষি ব্যবস্থা।

এই কৃষি শুধু স্বাস্থ্যকর খাবারই দেয় না, মাটি বাঁচায়, পানি বাঁচায়, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং কৃষকের সম্মান ফিরিয়ে আনে।

প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের মডেল—বাংলাদেশের স্থানীয় জিনসম্পদের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ

এখানে স্থানীয় গরু, দেশি ছাগল, দেশি হাঁস–মুরগি, ভেড়া—সবই প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন-পালন হচ্ছে। কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নির্ভরতা নেই। গবাদিপশুর পুষ্টি, পরিচর্যা ও রোগ প্রতিরোধ পুরোপুরি প্রকৃতিনির্ভর। সংরক্ষিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের আসল জিনগত শক্তি।

মৎস্য উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ এবং লাভজনক মাছের পুকুরগুলোতে প্রকৃতিনির্ভর উৎপাদন হচ্ছে—জৈব সার, প্রাকৃতিক খাদ্য, পরিষ্কার পানি, কম ঘনত্ব—সব মিলিয়ে একটি আদর্শ মডেল তৈরি করেছে।

মূল্যায়ন সভা,কৃত্রিম প্রজননের অগ্রগতি,ঈশ্বরদী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত