ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কম খরচে বেশি লাভ, সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হচ্ছে পানিফল চাষ

কম খরচে বেশি লাভ, সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হচ্ছে পানিফল চাষ

উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বর্তমানে এই জেলার কৃষকরা বিভিন্ন ফল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। সাতক্ষীরায় প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে পানিফলের চাষ। জেলায় জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষীরা।

পানিফল চাষ জলাবদ্ধ ও পতিত জমিতেও করা যায় বলে স্বল্প সময়ে ভালো লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফল ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলায় ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে এই ফল। চাষাবাদে খরচ কম, বিপরীতে অল্প সময়ে ভালো লাভ পাওয়া যায়, তাই আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।

পানিফল মূলত একটি জলজ উদ্ভিদ। পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতেও সহজেই চাষ করা যায়, যা কৃষকদের জন্য বড় সুবিধা। এর মাধ্যমে কৃষকরা নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন এবং বেকারত্ব কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

কলারোয়া এলাকার পানিফল চাষি মো. ইয়াকুব্বর আলী জানান, সাড়ে তিন বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিন বছর ধরে এই ফল চাষ করছি। যা খরচ হয় তার থেকে দ্বিগুণ লাভ হয়। এর আগে জায়গাটা ফেলানো ছিল। এ জন্য জমিটা লিজ নিয়ে আমি এই পানিফল চাষ শুরু করি। এই ফল লাগিয়ে আমার জীবন–জীবিকা ভালোই চলছে।

তিনি আরও বলেন, এ বছর প্রায় এক লাখ টাকা খরচ করেছি। আল্লাহ দিলে ফল ভালোই হচ্ছে। তবে অনেক অংশ ইঁদুর নষ্ট করে দিচ্ছে। ১ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ থাকবে আশা করছি। তবে পারিশ্রমিক বেরিয়ে যায় বেশি। এছাড়া ইঁদুর ঠেকাতে পারলে আরও বেশি লাভ করা সম্ভব।

অন্য চাষিরা জানান, পানিফলের ফলন আসে প্রায় তিন মাস বয়সে এবং এরপর আরও তিন মাস ধরে এই ফলন পাওয়া যায়। মোট ছয় মাসে বিঘাপ্রতি ১০–১৫ হাজার টাকা খরচ করে ৭০–৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করা সম্ভব। এতে যেমন চাষিরা লাভবান হন, তেমনি শ্রমিকরাও দিনে ৬ ঘণ্টা কাজ করে সাড়ে ৩শ’ টাকা উপার্জন করতে পারে এবং সংসার চালাতে সক্ষম হন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর জেলায় ১৩৬ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। চলতি বছর তা ২৮ হেক্টর বেড়ে ১৬৪ হেক্টরে পৌঁছেছে।

গত ২০২১–২২ সালে ১০৬ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৭৫৫ টন পানিফল উৎপাদিত হয়। ২০২২–২৩ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৪২ হেক্টরে দাঁড়ায়। ২০২৩–২৪ সালে জেলায় প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর পানিফল চাষের পরিমাণ বেড়েছে। পানিফল পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল, যা মানবদেহে ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই চাষ আরও বাড়ানোর জন্য স্বল্প সুদে ঋণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পানিফল চাষ,সাতক্ষীরায় জনপ্রিয়,কম খরচে বেশি লাভ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত