ঢাকা রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হোসেনপুরে বেড়েছে লেপ-তোষকের চাহিদা: ব্যস্ততায় কারিগররা

হোসেনপুরে বেড়েছে লেপ-তোষকের চাহিদা: ব্যস্ততায় কারিগররা

ক্যালেন্ডারের পাতায় শীতকাল না আসলেও প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে শীতের হাওয়া। ধীরে ধীরে বাড়ছে এর তীব্রতা। এরই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে কিশোরগঞ্জে হোসেনপুরে লেপ-তোষক তৈরির কারিগর (ধুনকর) ও ব্যবসায়ীদের। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে ভোরের সকাল। সন্ধ্যা নামলেই অনুভূত হচ্ছে শীত। পাতলা কাঁথায় মানছে না শীত। তাই হিমেল ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন লেপের উষ্ণতার।

শীতের তীব্রতা বাড়ার আগেই মানুষ ভিড় জমাচ্ছে লেপ-তোষক তৈরির বেডিং স্টোরগুলোতে।

হোসেনপুর উপজেলায় প্রায় শতাধিক লেপ-তোষক তৈরির দোকানে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন ধুনকররা। শীতের আগমনকে উপলক্ষ্যে দোকানগুলোতে লেপ-তোষক বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ। হিমেল ঠাণ্ডায় শরীরকে সতেজ রাখার জন্য বিশেষ করে লেপের চাহিদা বেড়ে যায়।

শীতের প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাড়-কাঁপানো পরিস্থিতি রাতের নিদ্রায় একটু আরামের জন্য লেপের উষ্ণতা প্রশান্তি এনে দেয়। তাইতো বেড়েছে লেপ-তোষক তৈরি ধুনকরদের ব্যস্ততা।

এছাড়া ভ্রাম্যমাণ লেপ-তোষক ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েছে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাটে। হিমেল শীতের পরশ থেকে উষ্ণতা পেতে কেউ পুরনো লেপ-তোষক, বালিশ ঠিকঠাক করছে, আবার কেউ নতুন তৈরি করার অর্ডার দিচ্ছেন।

অন্যদিকে অনেকে উঠিয়ে রাখা লেপ-তোষক রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন।

রোববার উপজেলা বিভিন্ন বেডিং ও দোকানগুলোতে গিয়ে তাদের কর্মব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে। কারিগররা কেউ তুলো ধুনছে, কেউ ব্যস্ত লেপ-তোষক সেলাইয়ের কাজে, কেউ বা লেপে হরেকরকম ডিজাইন ফুটিয়ে তুলছেন। শীত মৌসুমেই তাদের সারা বছরের ব্যবসায়িক হিসাব মেলাতে হয়।

উপজেলার অর্ধশতাধিক কারিগর শীত মৌসুমে লেপ-তোষক তৈরি করে সারা বছর সংসার চালানোর মতো অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করেন। তাই শীতমৌসুমি এ ব্যবসায় একটু বেশি বিক্রির জন্য দিন-রাত সমানতালে পরিশ্রম করছেন তারা।

বর্তমানে বাজারে শিমুল তুলা প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, কার্পাস তুলা প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, প্রতি কেজি কালো হল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, কালো রাবিশ তুলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, সাদা তুলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে দামে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় তুলার দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাপড়ের প্রতি গজে ১০ থেকে ১৫ টাকা দাম বেড়েছে। প্রতিপিছ লেপ-তোষক তৈরিতে খরচ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি ধরনের একটি লেপ বানাতে খরচ হচ্ছে ১২০০ থেকে দুই হাজার টাকা। তোষক বানাতে ১৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বিভিন্ন রকমের দামি-কমদামি তুলার প্রকারভেদে লেপ-তোষকের দাম কম-বেশি হয়।

প্রতিদিন একজন কারিগর পাঁচ থেকে ছয়টি লেপ তৈরি করতে পারেন। আর একটি লেপ-তোষক বিক্রি করলে তাদের ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। শীত মৌসুমের শুরুর দিকে কাজের চাপ বেশি থাকে। প্রতিদিন তাদের ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা লাভ থাকে।

উপজেলার পুমদী ইউনিয়ন থেকে লেপ কিনতে আসা নিপেল বলেন, ‘শীত মৌসুম চলে আসছে। এখন আর পাতলা কাঁথায় শীত মানছে না। তাই পুরনো লেপ নতুন করে তৈরি করতে এসেছি। কাপড় ও তুলার দাম বেড়ার কারণে খরচ বেশি লাগছে।’

জগদল গ্রাম থেকে লেপ কিনতে আসা নাজমুল বলেন, ‘ছেলের জন্য একটা লেপ কিনতে এলাম। গত বছর যে লেপ ১২০০ টাকায় নিয়েছি, এ বছর সমমানের লেপই ১৮০০ টাকায় কিনতে হলো।’

উপজেলা হনুমানতলা লেপ-তোষক ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কারিগরদের মজুরী বৃদ্ধি, লেপের উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম একটু বেশি। তবে শীত মৌসুমের আগমনে ক্রেতারা নতুন লেপ-তোষক কিনে নিচ্ছেন।’

ব্যস্ততায় কারিগররা,লেপ-তোষকের চাহিদা,হোসেনপুর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত