ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কিশোরগঞ্জে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ করে লাভবান কৃষক

কিশোরগঞ্জে বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ করে লাভবান কৃষক

কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিলাতি ধনিয়াপাতা। এক সময় গ্রামে বাড়ির আঙিনায় পরিবারের চাহিদা মেটাতে চাষ হতো এ পাতা। এবার জমিতে চাষ করে সহজে ভালো ফলন, বাজারে প্রচুর চাহিদা এবং ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। জেলার সকল উপজেলায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ দ্রুত ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার কলাপাড়া গ্রাম। বাজারে বিক্রয়ের জন্য জমি থেকে বিলাতি ধনিয়াপাতা সংগ্রহ করছেন কৃষকেরা। জমিতে চাষকৃত এ পাতার দৃশ্য দেখতেও মনোরম। গেলো কয়েক বছর ধরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার কৃষি জমিতে। বছরের ডিসেম্বর মাসে বীজ বপন করার পর ফলন পাওয়া যায় আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। বিলাতি ধনিয়া পাতা অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় জেলার চাষীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এ ধনিয়া পাতার।

করিমগঞ্জ উপজেলার বাইশকাহনিয়া গ্রামের কৃষক মো. মনজিল মিয়া বলেন, ধনিয়াপাতা চাষ করছি। এটা খুবই লাভজনক, চার-পাঁচ বছর ধরেই করছি। আমাকে দেখে অনেকেই চাষ করছে। এটা বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। ব্যাপারী এসে খেত থেকেই কিনে নিয়ে যায়। এবার তিন একর জমিতে এ পাতা চাষ করেছি। খরচ হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা, বিক্রি হবে ৬ লক্ষ টাকার উপরে, এমনটাই আশা করছি।

সদর উপজেলার কলাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমি প্রথমে চার শতক জমিতে ধনিয়া পাতা চাষ করেছিলাম, ভালো লাভবান হয়েছি। এবার ৫০ শতক জমিতে চাষ করেছি, খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা। বিক্রি হয়েছে ৪ লক্ষ টাকা, বেপারি খেত থেকেই নিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, কৃষকের কাছ থেকে ধনিয়াপাতা কিনি। এসব পাতা খেত থেকে তুলে, ধুয়ে বান্ডিল করে, বস্তায় ভরে ঢাকা কাওরান বাজার নিয়ে বিক্রি করি। সিলেটেও নিয়ে যাই, এ পাতার খুব চাহিদা।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছিরুজ্জামান বলেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকের পাশে থেকে এ পাতা চাষের জন্য উৎসাহ এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছি আমরা। এই বিলাতি ধনিয়া পাতা কৃষক তার ঘরের আশপাশে চাষ করতো। আমরা তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করাচ্ছি। এতে তারা খুব লাভবান হচ্ছে। আমরা তাদের পাশে থেকে পরামর্শসহ সার, বীজ দিচ্ছি। উঁচু জমিতে চাষযোগ্য এ ধনিয়া পাতার প্রতি শতাংশে বীজ লাগে ১০০ গ্রাম।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাদিকুর রহমান বলেন, বিলাতি ধনিয়া পাতা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপাদেয় একটি উদ্ভিদ। যা মানুষের রক্তচাপ কমায়, রক্তের কোলস্টরল কমায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। হজমে হজমে সহায়তা করে। প্রতি বছরই কিশোরগঞ্জে এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু এ ফসলটি খুবই লাভজনক, তাই সামনে এর চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাকরি। চলতি বছর জেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়ার আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮৫ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকার উপরে।

কিশোরগঞ্জ,বিলাতি ধনিয়া পাতা,কৃষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত