ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঈশ্বরদীতে আট কুকুরছানা হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের

ঈশ্বরদীতে আট কুকুরছানা হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের

ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে মা কুকুরের অগোচরে আটটি কুকুরছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার ( ২ ডিসেম্বর) রাতে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোছা: আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে এই মামলাটি করেন ঈশ্বরদী থানায়। ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোছা: আকলিমা খাতুন বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ এর ৭ নং ধারা অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার রাত্রি নয়টার দিকে ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি।

মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি বেগমকে আসামি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাটি জাতীয় দৈনিক টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার ফোন করে বলেন এই ঘটনা অমানবিক জানিয়ে বলেন এই ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। তাই প্রাণী হত্যায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ফোন করে তার পক্ষে মামলা দায়েরের নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের পরিবারকে সরকারি কোয়াটার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর ) বিকেলে ঢাকার এনিমেল অ্যাকটিভিস্ট কমিটির তদন্ত টিম ঈশ্বরদী এসেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শহরজুড়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয় এবং ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাতে থাকেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, “কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নকে মঙ্গলবারের মধ্যে গেজেটেড কোয়ার্টার ছাড়তে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেনেছি তারা ইতোমধ্যে বাসা খালি করছেন।” অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, অভিযুক্ত নিশি আকতার কোয়ার্টার ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, “বাচ্চাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির পাশে থাকতো এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে একটি সাজিনার গাছের গোড়ায় রেখে আসি।কীভাবে পুকুরে পড়েছে জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।”

উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যার পর গেজেটেড ভবনে বসবাসরত কর্মকর্তার স্ত্রী নিশি আকতারের অবহেলায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে আটটি কুকুরছানা ডুবে মারা যায়। ছানাগুলো হঠাৎ নিখোঁজ হলে মা কুকুরটি রাতভর আবাসিক এলাকা, অফিসার্স ক্লাব ও বিভিন্ন বাড়ির সামনে ছুটোছুটি করে আর্তচিৎকার করে। খাবার দিলেও সে মুখ দেয়নি। তখনও কেউ জানতেন না ছানাগুলোর কী হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন। তখন তার ছেলে বলে—‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। তুলে খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই।”

মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন এবং সেডেটিভ ইনজেকশন প্রয়োগ করেন।

ঈশ্বরদী,কুকুরছানা,মামলা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত