
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যাহ’র বাড়িতে চোর সন্দেহে পিটিয়ে এক দিনমজুরকে হত্যা করার ঘটনায় এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার হওয়া আসামির নাম মো. লুৎফুর রহমান ওরফে লাতু (৬০)। তিনি নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের যাদবপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম মাস্টার বাড়ির মৃত নজির আহাম্মদের ছেলে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়।
শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে রাতে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে, গত সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার যাদবপুর গ্রাম থেকে পিবিআইর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
নিহত মো. আলাউদ্দিন (৩০) উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাটইয়া গ্রামের মহিন উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন।
পিবিআই জানায়, ২০২৪ সালের ১ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তৎকালীন চেয়ারম্যান এ.কে.এম সিরাজ উল্যার বাড়ির ঘাটলায় চোর সন্দেহে আলাউদ্দিনকে আটক করেন বাড়ির কেয়ারটেকার লাতু। পরে চেয়ারম্যান সিরাজের নির্দেশে লাতুসহ এজহারনামীয় অন্যান্য আসামিরা লোহার রড, লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তাকে গুরুতর জখম করে।
এরপর ‘বিচার বাকী আছে’ বলে চেয়ারম্যান সিরাজের বাড়ির সামনে দু’তলা আজিমা দরবার হলে তাকে আটকে রাখা হয়। একই রাতে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।
পিবিআই আরও জানায়, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আলাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার পাঁচ দিন পর ৬ মে বিকেলে তিনি মারা যান। এ.কে.এম সিরাজ উল্যাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ঘটনাটি মীমাংসার উদ্যোগ নেন এবং ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন। ওই আশ্বাসে নিহতের পরিবার লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করে।
কিন্তু প্রতিশ্রুত সমাধান না পেয়ে নিহতের মা আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে কবিরহাট থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়। পরে ১৩ জুন, মৃত্যুর ৩৬ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
নোয়াখালী পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) এম ফয়জুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ১৭ মাসের নিবিড় তদন্তে হত্যা মামলার এ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত এগিয়ে চলছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।