ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুদানে নিহত সৈনিক শামীম রেজার বাড়িতে শোকের মাতম

সুদানে নিহত সৈনিক শামীম রেজার বাড়িতে শোকের মাতম

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শামীম রেজার বাড়িতে চলছে হৃদয়বিদারক শোকের মাতম। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা, স্ত্রী ও স্বজনরা। পুরো গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।

নিহত সৈনিক শামীম রেজার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামে। তার বাবা আলমগীর ফকির। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম রেজা ছিলেন সবার বড়। পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে তিনি ছিলেন শান্ত স্বভাবের, দায়িত্বশীল এবং পরিশ্রমী একজন তরুণ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শামীম রেজা ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন। কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। চলতি বছরের ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে সুদানে যান। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের হামলায় তিনি নিহত হন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নিহত সৈনিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠান জুড়ে স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড়। কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। সদ্য নির্মিত একতলা বাড়ির ভেতরে শোকাহত মা ও স্ত্রী আহাজারিতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শোকের ভারে নির্বাক হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার।

নিহত শামীম রেজার বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলেটার দেড় বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এখনো তার কোনো সন্তান হয়নি। কত স্বপ্ন ছিল ছেলেকে নিয়ে। অন্তত শেষবারের মতো আমার ছেলের লাশটা দেখতে চাই।”

নিহত সৈনিকের ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, “গতকাল টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকেই আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই, ভাই আর নেই। গত শুক্রবারই সে বাড়িতে ভিডিও কলে কথা বলেছিল। তখনও কিছু বুঝতে পারিনি।”

শামীম রেজার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের আবহ নেমে আসে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা নিহত সেনাসদস্যের বাড়িতে গিয়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তারা শামীম রেজার আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত অবস্থায় এক তরুণ সেনাসদস্যের এভাবে প্রাণ হারানোতে এলাকাবাসী ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করে বলেন, দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে গিয়ে জীবন দেওয়া এই সেনা জাতির গর্ব। তার আত্মত্যাগ যেন জাতি কখনো ভুলে না যায়, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

সুদান,নিহত,সৈনিক,শোকের মাতম
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত