
পাবনার একমাত্র মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও কার্যক্রম না থাকায় গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। লুটপাট হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানের সব সম্পদ। অথচ মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার পর একটানা ১৬ বছর উৎপাদন কর্মমুখর ছিল। প্রতিবছর উৎপাদন হতো পাঁচ হাজার কেজি পোনা ও দুই হাজার কেজি রেণু। কিন্তু এখন এটির বন্ধ্যাত্ব দশা।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও কার্যক্রম না থাকায় প্রতিষ্ঠানের সম্পদ লুট হয়ে গেছে। এলাকাটি পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আখড়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩৭ বিঘা জমি নিয়ে ১৯৯০ সালে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় যৌথ ব্যবস্থাপনায় মৎস্য অধিদপ্তর প্রজনন মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি গড়ে তোলে। লক্ষ্য ছিল উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন বাড়ানো। এজন্য খনন করা হয় ১০টি পুকুর। স্থাপন করা হয় পানি সরবরাহের পাঁচটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প, আধুনিক আলোকবাতি, হ্যাচারিসহ পোনা উৎপাদনের আধুনিক ব্যবস্থা।
টানা ১৬ বছর উৎপাদনের পর মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়ায় ২০০৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় ওই প্রকল্প। মাছের ডিম ও পোনা উৎপাদন বন্ধের পর এই কেন্দ্রের ওপর স্থানীয় প্রভাবশালীদের নজর পড়ে। ২০০৬ সালে মাছ চাষের জন্য সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য উন্নয়ন সমবায় সমিতি বার্ষিক ২৫ হাজার টাকায় পাঁচ বছরের জন্য এটি ইজারা নেয়। সবশেষ ২০১১ সালে ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও তা আর নবায়ন করা হয়নি।
একপর্যায়ে কেন্দ্রটি অবৈধ দখলে নিয়ে ব্যক্তিগত খামার গড়েন তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আসিফ শামস রঞ্জন। তিনি মাছের পরিবর্তে গড়ে তোলেন নিজস্ব গরুর খামার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পানি উন্নয়ন বোর্ড দখল ফিরে পেলেও বেহাল দশা কাটেনি প্রজনন কেন্দ্রটির।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় লুট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। স্থানীয় দস্যু ও মাদকসেবীরা খুলে নিয়ে গেছে অবকাঠামোর লোহা ও কাঠের দরজা-জানালা। লুট হয়েছে সেচ পাম্প। চুরি হয়েছে মূল্যবান বৃক্ষ, সীমানা প্রাচীরের কাঁটাতার, অর্ধশত ফ্লাডলাইট ও বৈদ্যুতিক পোলসহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ। ভরাট করা হয়েছে বেশিরভাগ পুকুর। বাকিগুলো শুকিয়ে গেছে। ঝোপ-ঝাড়ে এখন প্রজনন কেন্দ্রটিতে ভুতুড়ে পরিবেশ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি গরু ও মাদকসেবীদের বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়ায় সাবেক ডেপুটি স্পিকারের ছেলে আসিফ শামস রঞ্জন দখলে নিয়ে এখানে গরুর খামার স্থাপন করেন। তাদের ভয়ে কেউই পুনরায় এটি চালুর উদ্যোগ নেননি।
তারা আরও জানান, সাঁথিয়ায় কোনো হ্যাচারি না থাকায় বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ দূরবর্তী এলাকা থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হয় মৎস্যজীবীদের। এতে তাদের খরচ ও ভোগান্তি বাড়ে। তাই আধুনিক পরিসরে দ্রুত এ প্রজনন কেন্দ্রটি চালুর দাবি জানান তারা।
চক নন্দনপুরের আতিক ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দিনরাত এখানে মাদকসেবন চলে। এসবের কারণে এলাকার ছেলেপেলেও নষ্ট হচ্ছে। আবার সরকারি সম্পদ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এটি পুনরায় চালু করা উচিত।’
স্থানীয় মনসুর ও জায়েদ হোসেন বলেন, ‘এটি এখন একটি বন্ধ্যা প্রতিষ্ঠান। ৫ আগস্টের পর এখানকার বিল্ডিংয়ের দরজা-জানালাসহ সব খুলে নিয়ে গেছে। অথচ এটি পুনরায় চালু হলে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন। মাছের উৎপাদন বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’
এ বিষয়ে সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুর রহমান বলেন, মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায়। লোকবল ও বরাদ্দ না থাকায় প্রজনন কেন্দ্রটিতে কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। তবে দায়িত্ব দেওয়া হলে মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন কেন্দ্রটি পরিচালনা করা হবে।
পাবনার বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।