ঢাকা রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

যুবদল নেতাকে হত্যার ছক, আদালতে দুইজনের স্বীকারোক্তি

যুবদল নেতাকে হত্যার ছক, আদালতে দুইজনের স্বীকারোক্তি

মিথ্যা মামলায় জড়ানো, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ক্ষোভ থেকে যুবদল নেতা সাইফুল ইসলামকে হত্যার ছক আঁকেন অপরাধীচক্র। তার ধারাবাহিকতায় গেল ৯ ডিসেম্বর সাইফুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়েন অপরাধীরা। হত্যার ছক কেন আঁকা হয়েছিল, তার বিস্তর বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবাববন্দি দিয়েছেন আটক ৫ জনের মধ্যে দুইজন। তারা হলেন মাসুদ হাসান বকুল (২০) ও মো. ওমর ফারুক প্রকাশ সাকিব (১৮)।

তবে ওই দিন তারা ঘটনায় জড়িত থাকলেও ইমরান উদ্দিন খোকা প্রকাশ আরিয়ান খোকা (২৫) সাইফুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন বলে তারা আদালতে জবানবন্দি দেন। দায়িত্বশীল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে আটক অপর ৩ জনের পৃথক ৫ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেছেন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গত ৯ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৮টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলী এলাকা থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাস টার্মিনালের দিকে যাওয়ার পথে উত্তরন আবাসিক এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে একাধিক মোটরসাইকেলযোগে আসা দুর্বৃত্তরা আকস্মিকভাবে যুবদল নেতা সাইফুল ও ফারুককে গুলি করে পালিয়ে যায়।

পরে পুলিশের একটি আভিযানিক দল ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোরে বান্দরবানের লামা উপজেলার একটি রিসোর্ট থেকে পাঁচজনকে একত্রে আটক করা হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের পূর্ব লারপাড়ার বাসিন্দা কামরুল হাসান বাবু (২৬), ইমরান উদ্দিন খোকা প্রকাশ আরিয়ান খোকা (২৫), আব্দুল কাইয়ুম (৩৩), মো. সাকিব (২০) এবং মাসুদ হাসান বকুল (১৭)।

গতকাল শনিবার আটক ৫ জনকে আদালতে তোলা হলে এর মধ্যে দুইজন আদালতে জবানবন্দি দেয়ার সম্মতি জানান। তারা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি শেষে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

যেকারণে যুবদল নেতা সাইফুলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব

২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি কক্সবাজারের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছে লারপাড়ায় ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে লারপাড়া এলাকার নুরুল হুদার ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩১) ও আব্দুল হামিদের ছেলে কায়সার হামিদ (২৮) মারা যান। এর মধ্যে নিহত সাইদুল ইসলাম যুবদল নেতা সাইফুল ইসলামের আপন ভাই, অপরজন তার নিকটতম আত্মীয়। এর পর অপরাধী চক্রের সঙ্গে সাইফুলের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি গুলি ও ছুরিকাঘাত করে যুবদল নেতা সাইফুল ইসলামকে (৪০) হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। এই পৃথক ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। ওইসব মামলায় অনেকেই আসামি।

এর মধ্যে অনেকেই ঘটনায় জড়িত নয় বলে দাবি করেন। মামলার ক্ষোভ থেকে সকল অপরাধী সংঘবদ্ধ হয়ে যুবদল নেতা সাইফুল ইসলামকে হত্যার ছক আঁকেন। তার ধারাবাহিকতায় ৯ ডিসেম্বর সাইফুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়ে।

এতে চালকের আসনে থাকা ফারুকও আহত হন। তবে অপরাধীদের লক্ষ্যবস্তু ছিল সাইফুলকে হত্যা করা।

যেভাবে গ্রেপ্তার হলেন আসামিরা

অভিযানে অংশ নেয়া কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, ৯ ডিসেম্বর ঘটনাটি সংগঠিত হওয়ার পর থেকে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে অপরাধীদের ধরতে পুলিশের সক্রিয় তৎপরতা ছিল। তার ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহমেদ পেয়ারসহ সংশ্লিষ্ট অফিসারগণ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত ও অবস্থান নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালায়।

গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা থানাধীন মিরজিরি মাতামুহুরি রিভার ভিউ রিসোর্ট থেকে তাদের আটক করা হয়।

পাহাড়ী জনপদে কিভাবে অভিযানে গেলেন জানাতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ আরও বলেন, কাজে আন্তরিকতা থাকলে সফল হওয়া যায়। পাহাড়ি পথ, নদী পথ পেরিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছে।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) চিন্ময় বড়ুয়া জানিয়েছেন, আটককৃতদের মধ্যে দুই জন ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য তিনজনের জন্য পৃথক ৫ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।

দুইজনের স্বীকারোক্তি,আদালত,যুবদল নেতাকে হত্যার ছক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত