ঢাকা শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মৌলভীবাজারে শীতে চরম কষ্টে চা শ্রমিকরা, বাড়ছে রোগ-ব্যাধি

মৌলভীবাজারে শীতে চরম কষ্টে চা শ্রমিকরা, বাড়ছে রোগ-ব্যাধি

মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগানের গাছ-গাছালিতে ঘেরা থাকায় চা বাগান গুলোতে পৌষের শুরুতে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। তার সাথে হীমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশা তুলনামূলক বেশি থাকে। ফলে প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েন বয়স্ক চা শ্রমিক ও তাদের শিশুরা। পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে হাড় কাঁপানো শীতে তারা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কয়েক বছর আগেও শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী বাগান কর্তৃপক্ষ শীত নিবারনে চটের বস্তা বিতরণ করলেও এখন আর কোনো কিছু দেওয়া হয় না। শীতের কারণে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগও বাড়তে শুরু করেছে।

বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, মৌলভীবাজার সদর, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক চা শ্রমিক শীত মৌসুমে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য তাদের জীবনমান অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

চা শ্রমিকরা জানান, স্বল্প আয়ের কারণে গরম কাপড় কেনা তাদের অধিকাংশেরই সামর্থ্যের বাইরে। শীত নিবারনে এসব পরিবার সদস্যরা ঘরের ভেতরে ও বাইরে খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাত কাটাতে হয়। বর্তমানে চা বাগানে শ্রমিকদের মধ্যে বাগান পঞ্চায়েত, জনপ্রতিনিধি ও ম্যানেজমেন্টের সুবিধাভোগীসহ সচ্ছল হাতে গোনা কিছু পরিবার স্বাচ্ছন্দে দিন কাটালেও ৯০ শতাংশেরই দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে।

শমশেরনগর চা বাগানের শ্রমিক সবিতা রানী, আদরমনি মৃধা বলেন, দৈনিক মাত্র ১৮৭ টাকা মজুরিতে পাঁচ, সাত সদস্যের পরিবারের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। শ্রমিকরা খাবে কি আর কাপড় চোপড় কিনবেই বা কি? আর বাজারে জিনিসপত্রের দামও যে হারে বাড়ছে তাতে গরম কাপড় কেনা মোটেও সাধ্য নেই। অভাব অনটনসহ সব মিলিয়ে শীতে কষ্ট আরও একধাপ বেড়েছে। সবগুলো চা বাগানে একই অবস্থা।

তারা আরও বলেন, শীতে খড়কুটো বিছিয়ে কেউ কেউ ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন। কেউ কেউ বস্তা বিছিয়ে ঠান্ডা থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন আবার কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীরে গরম ভাপ লাগান।

শমশেরনগর কানিহাটি চা বাগানের শ্রমিক নেতা সীতারাম বীন ও চা শ্রমিক সংঘের নেতা রাজদেব কৈরী বলেন, শীতের সময়ে চা শ্রমিকদের মধ্যে বাগান কর্তৃপক্ষ কোনো শীতবস্ত্র বিতরণ করেন না। কয়েক বছর আগে বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে চটের বস্তা বিতরণ করতো। এখন আর কিছুই দেওয়া হয় না। অধিকাংশ শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা শীতে কষ্ট পোহাচ্ছেন।

তাছাড়া এখন ঠান্ডা বাড়তে শুরু করলেও চা বাগানগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থাও নাজুক। ডিসপেনসারীগুলোতে ভালো চিকিৎসা সুবিধাও নেই। সবমিলিয়ে চা শ্রমিকরা ভালো নেই। বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে সর্দি-কাশি, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সুচিকিৎসা কোনো ব্যবস্থাও নেই অধিকাংশ চা বাগানে।

মৌলভীবাজার,তীব্র শীত,চা শ্রমিক,রোগ-ব্যাধি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত