ঢাকা বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ঘোড়াঘাটে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর আছে, বাসিন্দা নেই

ঘোড়াঘাটে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর আছে, বাসিন্দা নেই

সরকার থেকে পাওয়া কোনো কিছু যা ইচ্ছে তাই ভাবে যে ব্যবহার করা যায়—দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্প-২ স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ‘সরকারের মাল, দরিয়া মে ঢাল’, অর্থাৎ সরকারি জিনিস নদীতে বা পানিতে ফেলে দাও—এটির একটি বাস্তব উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে এই প্রকল্প।

উপজেলার বেলওয়া আন্দিয়া পুকুর এলাকায় অসহায়, ভূমিহীন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির জন্য ২০০৪ সালে ৩০টি পরিবারের জন্য ৩০টি সরকারি ঘর নির্মাণ করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় আশ্রয়ন প্রকল্প-২।

সরেজমিন সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সে সময় আশ্রয়ন প্রকল্পের ৭, ৮ এবং ৯—এই তিনটি ব্যারাক শুধুমাত্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের জন্য তৈরি করা হয়। পরে ঘরগুলোতে বসবাসের জন্য ৩০টি সুবিধাভোগী পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলেও বর্তমানে সেখানে বসবাস করছে মাত্র ৫টি পরিবার। কয়েক বছর থাকার পর একে একে ২৫টি পরিবার আশ্রয়ন প্রকল্পের এই ঘরগুলো ফেলে রেখে চলে গেছে।

এখন এই পরিত্যক্ত ঘরগুলোর মধ্যে দুই-তিনটি তালাবদ্ধ, অধিকাংশ ঘরের জানালা-দরজা উধাও, আবার কোনো কোনো ঘরের টিন খুলে নিয়ে গেছে। অযত্ন আর অবহেলায় ঘরগুলো ছেয়ে গেছে লতাগুল্মে। পরিত্যক্ত আশ্রয়ন প্রকল্পের এই ব্যারাকের কিছু ঘর এখন মাদকসেবিদের অভয় আশ্রমে পরিণত হয়েছে।

এদিকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া, কর্মসংস্থানের অভাব, দূরে অবস্থান, বিক্রির প্রবণতা এবং পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা না থাকাকে দোষারোপ করছেন সেখানকার স্থানীয়রা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, এখানে যে সমস্ত আদিবাসী (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি) কে ঘর দেওয়া হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগেরই নিজস্ব ভালো ঘরবাড়ি ছিল। তা সত্ত্বেও এখানে তাদের আবারও আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর দেওয়া হয়েছিল। ঘর পাওয়া এসব পরিবার মনে করেছিল, সরকারি ঘরে থাকলে সরকার হয়তো আরও অনেক কিছু দেবে। কিন্তু দুই-চার বছর পর যখন দেখলো এখানে আর কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, শুধু মাত্র ঘর পাহারা দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া কাজ-কর্মের জন্য দূরে দূরে যাওয়া লাগছে—তখন তারা আস্তে আস্তে আবার তাদের নিজের বাড়ি-ঘরে ফিরে গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ ২ থেকে ৩টি পরিবার কোনো রকমে এখানে বসবাস করছে।

আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা আশি ঊর্ধ্ব গেডা মার্ডি জানান, “২০ বছর ধরা আছি। ৩০ ঘর আছিলো, সব পলে গেছে। বর্তমানে আমার ঘরের টিন নষ্ট হয়া গেছে। বর্ষার সময় খুব কষ্ট হয় থাকতে।”

আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে চলে যাওয়া ছোট মুরমুর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, সেখানে তিনি আবারও নতুন করে সরকারি ভাবে রঙিন টিনের ইটের ঘর পেয়েছেন।

তিনি জানান, “১২-১৩ বছর ওখানে থাকলাম। পরে যখন আমার বাবা মারা যায়, তখন আমার মা একা হয়ে যায়। সে কারণে ওখান থেকে আমরা আবার মা-বাবার বাড়িতে ফেরত আসি। আসার পর এখন এখানে বসবাস করছি। এই জায়গাটা আমি ক্রয়ের জন্য বায়না করেছি। এখন কবলা বাকি আছে মাত্র।”

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবানা তানজিম জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো সম্পর্কে তিনি এইমাত্র অবগত হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি এবং উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা মিলে আশ্রয়ন প্রকল্পটি পরিদর্শন করে যেভাবে ভালো হয় সেভাবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

বাসিন্দা নেই,ঘর আছে,ঘোড়াঘাটে আশ্রয়ন প্রকল্প
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত