
সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি ব্যাংক রেজল্যুশন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান KPMG (Sri Lanka) এবং EY (Sri Lanka) ছয়টি সংকটাপন্ন ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান (Asset Quality Review) পর্যালোচনা করে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই ব্যাংকগুলোর মধ্যে পাঁচটি—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—তীব্র মূলধন ঘাটতি, শ্রেণিকৃত ঋণ ও তারল্য সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তাব করে, এসব ব্যাংককে একীভূত করে সরকারের মালিকানায় একটি নতুন শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হোক। তবে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক-এর মালিকানা সংক্রান্ত মামলা চলমান থাকায় সেটিকে প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারল্য সহায়তা প্রদান করা হলেও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি; বরং সংকট আরও গভীর হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার ও আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে রেজল্যুশন প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর আওতায় নতুন ব্যাংকটি “হস্তান্তরগ্রহীতা ব্যাংক” হিসেবে এবং সংকটাপন্ন পাঁচটি ব্যাংক “হস্তান্তরকারী ব্যাংক” হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুন ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন হিসেবে প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকা Bail-in প্রক্রিয়ায় মূলধনে রূপান্তর করা যেতে পারে এবং অবশিষ্ট ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার প্রদান করবে। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি নগদ ও ১০ হাজার কোটি সুকুক বন্ডের মাধ্যমে দেওয়া হতে পারে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিদ্যমান পাঁচ ব্যাংকের সব সম্পদ ও দায় নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হবে। তবে এসব ব্যাংকের ঋণাত্মক Net Asset Value (NAV) এবং মূলধন ঘাটতির কারণে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো দাবি পরিশোধের সুযোগ নেই। ব্যক্তিগত আমানতকারীদের জমাকৃত অর্থ ব্যাংক রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী ফেরত দেওয়া হবে, প্রয়োজনে আমানত সুরক্ষা তহবিল ব্যবহার করা যেতে পারে।
নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রশাসনিক ও লাইসেন্স প্রক্রিয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাংকের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
এ ছাড়া সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী মালিক, পরিচালনা পর্ষদ, কর্মকর্তা ও খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।