ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্তে বিশ্বে তেল সংকটের শঙ্কা

হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্তে বিশ্বে তেল সংকটের শঙ্কা

মার্কিন হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ স্ট্রেইট অব হরমুজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। ২২ জুন দেশটির পার্লামেন্ট প্রণালী বন্ধের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। এখন এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সুপ্রিম কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। খবরে বিশ্ববাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে-দ্রুত বেড়েছে জ্বালানির দাম।

বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ পরিবাহিত হয় এই জলপথ দিয়ে, যার আর্থিক মূল্য দৈনিক প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। প্রণালী বন্ধের ঘোষণায় সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ব্যারেলপ্রতি ৭৭.৩৬ ডলার এবং ডব্লিউটিআই তেলের দাম পৌঁছে ৭৪.১৫ ডলারে-যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এমন সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চীন, ভারত ও পূর্ব এশিয়ার তেলনির্ভর দেশগুলো। ফলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা তেহরানকে এ সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে।

মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের হরমুজ প্রণালী দৈনিক গড়ে ১৭-২০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহণের রুট। এটি বন্ধ হলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহে মারাত্মক সংকট দেখা দিতে পারে।

ইরান বিভিন্ন সামরিক কৌশল যেমন সমুদ্রে খনি পুঁতে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ড্রোন কিংবা দ্রুতগতির নৌকায় প্রণালী বন্ধ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে মার্কিন পঞ্চম নৌবহর ও আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাহিনী দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছে।

এই পথ অতীতে কখনো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়নি। ১৯৮০-৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালীন ইরান আংশিকভাবে নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটালেও নিজেদের তেল রপ্তানির প্রধান রুট হওয়ায় প্রণালী পুরোপুরি বন্ধ করেনি।

তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র ফোর্ডো, নাটাঞ্জ ও ইসফাহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোর ৪৮ ঘণ্টার মাথায় ইরান এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ডার এমেইল কোসারি জানান, মার্কিন আগ্রাসনের জবাবে ইরান যেকোনো ‘উপযুক্ত ব্যবস্থা’ নিতে প্রস্তুত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হরমুজ বন্ধের সিদ্ধান্ত ইরানের নিজের অর্থনীতির জন্যও আত্মঘাতী হতে পারে। কারণ তেল রপ্তানি বন্ধ হলে তেহরান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আরও আর্থিক চাপে পড়বে। তবু রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল হিসেবে এই সিদ্ধান্তকে ব্যবহার করতে পারে ইরান।

বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় উপসাগরীয় দেশগুলো বিকল্প রুট নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। তবে স্থলভাগে বিকল্প পথ না থাকায় সংকট আরও গভীর হতে পারে।

বিশ্লেষণ বলছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি তেহরানকে সাময়িক চাপ তৈরিতে সাহায্য করলেও, দীর্ঘমেয়াদে তা নিজের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

হরমুজ প্রণালী,বিশ্ব,তেল সংকট
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত