ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘মাইলস্টোনের ৩ শিক্ষকের মানবতা-সাহসিকতা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’

‘মাইলস্টোনের ৩ শিক্ষকের মানবতা-সাহসিকতা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারানো শিক্ষক মাহেরীন চৌধুরী, মাসুকা বেগম ও মাহফুজা খানম মানবতা ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় নিহত তিন শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি

এসময় তিনি পরিবারগুলোর কাছে গভীর সমবেদনা জানান এবং বলেন, “এই শোক আপনাদের একার নয়, জাতি হিসেবে আমরা এই বেদনাকে ধারণ করি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “যদিও কিছুটা সময় পেরিয়ে গেছে, তবে সেই মর্মান্তিক স্মৃতি এখনো সবার মনে দগদগে হয়ে আছে। আমি ঘটনাটি জানামাত্রই আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আপনারা যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে সময়ে সাক্ষাৎ করা শোভন হতো না।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আপনাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু এই দুঃসহ স্মৃতি মুছে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত যে আমাদের দেশে এমন শিক্ষক ছিলেন, যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন।”

সাক্ষাৎকালে নিহত শিক্ষকদের পরিবার তাদের স্মৃতিচারণ করেন। মাহেরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “ওকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল তখন ফোনে কথা হয়। সে বলেছিল—ওরাও তো আমার সন্তান, তাদের ফেলে আমি কীভাবে চলে আসি?” এসময় তিনি জানান, সেদিন হাসপাতালে দগ্ধ শিশুদের মুখে শোনা কথাগুলো আজও তাকে তাড়া করে বেড়ায়।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ২৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১৪ আগস্ট না ফেরার দেশে পাড়ি জমান শিক্ষক মাহফুজা খাতুন। তার মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “মা অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম মা সুস্থ হয়ে ফিরবেন। কিন্তু মা ছাড়া প্রতিটি দিন এখন স্বপ্নের মতো লাগছে। আমি তো এখন এতিম হয়ে গেলাম।”

শিক্ষক মাসুকা বেগমের পরিবার জানান, তিনি পরিবার-পরিজনের পাশে ছিলেন নিবেদিতভাবে, পাশাপাশি নিজের দায়িত্ব পালন করতেন আন্তরিকতার সঙ্গে। ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা আর তার স্কুল—এই দুই জগৎ নিয়েই তিনি বেঁচেছিলেন।”

তাদের কথা শুনে প্রধান উপদেষ্টা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “কষ্ট হলেও একইসঙ্গে গর্ব হয় যে আমাদের দেশে এমন শিক্ষক ছিলেন। তারা আমাদের নাগরিক জীবনের অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। তারা ছোট মানুষ ছিলেন না—তারা আমাদের বড় করেছেন, আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছেন।”

তিনি আশ্বাস দেন, নিহত শিক্ষকদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।

মানবতা-সাহসিকতা চিরস্মরণীয়,মাইলস্টোনের ৩ শিক্ষক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত