অনলাইন সংস্করণ
২১:৩২, ০৯ অক্টোবর, ২০২৫
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, দেশের বিদ্যমান স্বৈরাচারী ব্যবস্থা শেখ হাসিনাকে দানব বানিয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, এজন্য সংসদে একটি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ জাতীয় সংলাপে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
আলোচনার বিষয় ছিল, ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে?’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা ট্যাংকে চড়ে বা উর্দি পরে ক্ষমতায় আসেননি, সংবিধানও বাতিল করেননি। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসেছেন, যদিও সেই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু তিনি কীভাবে স্বৈরাচারে পরিণত হলেন? কীভাবে দানব হয়ে উঠলেন?—এই প্রশ্নের জবাব হলো, এ দেশের স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই তাকে দানবে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের লক্ষ্য হবে এ ধরনের স্বৈরাচারী বা দানবীয় ব্যবস্থা প্রতিরোধ করা। উচ্চকক্ষ থাকলে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি হতো, দায়বদ্ধতা আসতো এবং একক আধিপত্য বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিপীড়ন রোধ করা যেত। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অন্যতম শক্তি হলো ক্ষমতার ভারসাম্য—বাংলাদেশেও সেই মডেল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিপীড়নের কারণেই শেখ হাসিনা দানবে পরিণত হয়েছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোটে ১৯৩টি আসন পায়, আওয়ামী লীগ পায় ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোটে মাত্র ৬২টি আসন। আবার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ ভোটে ২৩০টি আসন পায়, বিএনপি ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোটে মাত্র ৩০টি আসন। এই অসামঞ্জস্যতাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় দুর্বলতা।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। এর ফলেই পরবর্তী সব নির্বাচন জালিয়াতি, একতরফা বা বিতর্কিত হয়েছে। উচ্চকক্ষ থাকলে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা প্রায় অসম্ভব হতো। কারণ, আইন প্রণয়নের আগে তা উচ্চকক্ষে পর্যালোচনা করা যেত এবং আবেগ বা প্রতিহিংসা থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো সংযত করা সম্ভব হতো।
বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, উচ্চকক্ষ যদি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে গঠিত হয়, তাহলে সেটি হবে কেবলই একটি ডুপ্লিকেট, যার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি ভোটের অনুপাতে গঠিত হয়, তাহলে উচ্চকক্ষ আসল চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের ভূমিকা পালন করতে পারবে এবং দেশে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি হবে। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ সবাই বলছে—আমরা নির্বাচন চাই। কিন্তু যদি জনগণের প্রতিনিধিরাই দুর্বৃত্ত হন, তাহলে সেই নির্বাচনের মাধ্যমেও পুরোনো সমস্যা ফিরে আসবে। তাই রাজনৈতিক সংস্কৃতি না বদলালে কোনো কাঠামোই কার্যকর হবে না।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহান। উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ আরও অনেকে।