ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

১২ বছরে সড়কে ঝড়লো ১ লাখ ১৭ হাজার প্রাণ

১২ বছরে সড়কে ঝড়লো ১ লাখ ১৭ হাজার প্রাণ

বাংলাদেশে গত এক দশকে সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন (প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার) নিহত ও ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সরকারের দুর্নীতি ও ভুলনীতি, পাশাপাশি অব্যবস্থাপনা এবং সড়ক পরিবহন খাতে অনিয়মকে দায়ী করে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে।

সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বাধীনতার আগে দেশে নিরাপদ ও স্বাশ্রয়ী নৌপথ এবং রেলপথ মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল, যার কারণে সড়কে দুর্ঘটনার হার মাত্র ২০ শতাংশ ছিল। স্বাধীনতার পর দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপশনের নামে সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পে বেহিসেবী লুটপাট, বেপরোয়া চাঁদাবাজি এবং নতুন নতুন সড়ক নির্মাণের কারণে সড়কে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, একাধিক নতুন সড়ক নির্মাণের ফলে মানুষের ৮০ শতাংশ যাতায়াত এখন সড়কে, যা দুর্ঘটনা বৃদ্ধির মূল কারণ।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সড়ক পরিবহন খাতে অনিয়ম, চালকের অযোগ্যতা, লাইসেন্সবিহীন চালক, অব্যবস্থাপনা, চালকের মাদক সেবন, বেপরোয়া গতি এবং নিরাপত্তা মানহীন যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, একই সময়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গাজার নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৪৫ হাজার হলেও বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এসব যুদ্ধের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।

তিনি আরও বলেন, দাতা সংস্থার নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ নৌ ও রেলপথের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণে নগরীতে চাপ বাড়লেও গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হয়নি। পথচারীদের জন্য নিরাপদ ফুটপাত ও পৃথক লেইন না থাকায় মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকেও প্রশ্নবিদ্ধ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় নামানো হলেও উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর অচল হয়ে যেতে পারে।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি উদ্যোগে মেট্রোরেল ও বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট চালু করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি দেশের সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও যাত্রী সুবিধার জন্য ১২ দফা সুপারিশও তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিরাপদ নৌ ও রেলপথের পুনঃপ্রয়োগ, সড়ক পরিবহন খাতের পূর্ণ সংস্কার, সরকারি উদ্যোগে ম্যাস ট্রানজিট ব্যবস্থা, ডিজিটাল বাস লেইন চালু, পরিবহন চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা এবং পথচারী ও সাইক্লিস্টদের জন্য পৃথক লেইন ও ফুটপাত তৈরি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ রফিকুজ্জামান, বারভিটার সভাপতি আবদুল হক এবং ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বাদল আহমেদ প্রমুখ।

১ লাখ ১৭ হাজার প্রাণ,সড়কে ঝড়লো,১২ বছর
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত