অনলাইন সংস্করণ
২৩:০৮, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নিয়ে মার্কিন উদ্বেগের বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ঢাকা ও বেইজিংয়ের সহযোগিতা তৃতীয় কারও বিরুদ্ধে নয়। আর এ সহযোগিতা কারও নির্দেশনায়ও পরিচালিত হবে না।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ–চীন সম্পর্ক: এগিয়ে যাওয়ার পথ’ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই আলোচনার আয়োজন করে সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডরস (এওএফএ)। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। আলোচনায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ৫০ বছরে পারস্পারিক রাজনৈতিক আস্থা দুই দেশের সম্পর্কের মূল ভিত্তি উল্লেখ করে ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় সঙ্গী হয়ে চীন একটি শক্তিশালী দেশ ও ভবিষ্যৎ গড়তে সহযোগিতা করতে চায়। সার্ক অকার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশ চীন পাকিস্তান ত্রিদেশীয় সুসম্পর্ক এই অঞ্চলের অগ্রগতিতে নতুন ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি। এসময় বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করেছেন তিনি।
চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিপদ নিয়ে মার্কিন উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করি। এটাই বাংলাদেশের অতীতের সরকারগুলো অনুসরণ করে এসেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কোনো বিদেশি শক্তির নির্দেশনা ছাড়া পরিচালিত হয়েছে। চীনের অবস্থান হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীন ও নিজস্ব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নীতি অনুসরণকে সমর্থন করা। আপনাদের কোনো বিদেশি শক্তির নির্দেশনায় পরিচালিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করি।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার মতে চীন–বাংলাদেশ সম্পর্ক জনগণের স্বার্থে। জনগণ বলতে সরকার, রাজনৈতিক দল। আর এ বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখুন। গত মার্চে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনে গিয়েছিলেন। ভুলে যাবেন না গুরুত্বপূর্ণ সফরটি ছাড়াও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের তিনটি প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ সফর হয়েছে চীনে। ওই তিনটি দলের নেতৃবৃন্দ এবং আরও কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারাও চীন সফর করেছেন। তারা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা চান। এটাই চীন–বাংলাদেশ সম্পর্কের শক্তি।
তিনি বলেন, এই সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে। আমি আরও বলতে চাই আমাদের এই সম্পর্ক আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে। আমাদের এই সহযোগিতা তৃতীয় কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে নয়। তাই আমাদের এই সহযোগিতা অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবে না। নির্বাচনের পরও বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে দুই দেশের এই সহযোগিতা আরও এগিয়ে যাবে। সহযোগিতা আরও টেকসই হবে। এই সম্পর্ক বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
চীনের প্রেসিডেন্টের বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগ (জিজিআই) নিয়ে প্রশ্ন করলে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, চলতি বছরে সেপ্টেম্বরে সাংহাই কোঅপারেশন সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট জিজিআই ঘোষণা করেছেন। আর এটি ঘোষণা করা হয়েছে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়। আমরা সাবাই জানি যে একটি দেশ তার নীতির মাধ্যমে বিশ্বে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করছে। ফলে দক্ষিণের এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের কাছে যায়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনকে সুরক্ষা দিতে বিশ্বকে একত্র করতে তারা চীনকে ভুমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানায়। ফলে আমাদের এসব আন্তর্জাতিক আইনকে সুরক্ষা দিতে হবে। না হলে পুরো বিশ্বের জন্য জঙ্গলের শাসন কায়েম হয়ে যাবে। এ কারণেই চীন জিজিআই প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রয়োজন।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ইয়াও ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। চীনকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই অনুরোধ করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনেও আমরা চেষ্টা করেছি। তবে বিষয়টি একা চীনের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়, এটি চীনের সক্ষমতার বাইরে। এটি অত্যন্ত জটিল সংকট। এর সঙ্গে অনেক স্টেকহোল্ডার জড়িত। আমরা যখন ২০২৩ সালে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করেছি, অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করেছে। কিছু দেশ ও সংস্থা প্রত্যাবাসন হোক- এটা চায় না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সব স্টেকহোল্ডারের ভূমিকা রাখতে হবে। চীন তার ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা চট্টগ্রামে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছি। আশা করছি আগামী নভেম্বরের মধ্যে নথিপত্রের সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত চীনের ৩০টি প্রতিষ্ঠান ১০০ কোটি ডলারের ওপর বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে।
আবা/এসআর/২৫