
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল আজ বুধবার সন্ধ্যায় অথবা কাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় ভাষণের সবকিছু চূড়ান্ত। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার সন্ধ্যায় অথবা বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণা করা হবে। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, তফসিল ঘোষণায় রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে। আজ (বুধবার) দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবে নির্বাচন কমিশন। তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত পোস্টাল ব্যালটে নিষিদ্ধ বা স্থগিত কোনো দলের প্রতীক থাকবে না।
প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ বিচারক চেয়েছেন সিইসি : মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম নাসির উদ্দিন। এসময়ে সিইসি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ বিচারক চেয়েছেন।
এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিচার বিভাগের সহযোগিতা চান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সিইসি প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ বিচারক চেয়েছেন। দেশের নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন সিইসিরা। তবে এবার সিইসি তার সচিবকে নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছি। উনি এ মাসে অবসরে যাবেন। আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। সেজন্য উনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘উনারা ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটি (নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি) ডেপ্লয় করবেন। আমাদের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজটা যাতে উনি ত্বরান্বিত করেন, সে বিষয়ে উনাকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
প্রধান বিচারপতি আশ্বাস দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটির যে ডেপ্লয়মেন্ট আছে, সেব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন এবং নেবেন, কোনো অসুবিধা হবে না বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলা নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।’
অপরদিকে, আজ (বুধবার) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় কিংবা কাল বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার বিষয় নিশ্চিত করেছেন ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ।
জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন তফসিল ঘোষণা করবেন। তফসিলে আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের দিন ধার্য করা হতে পারে বলে জানা গেছে। তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বেতারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ রেকর্ড করতে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ভোটের অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। প্রথম ধাপেই জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন দিয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে এ কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করবেন সিইসি। সেখান থেকে ফিরে বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করা হবে। রেকর্ড শেষে সন্ধ্যার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তবে কোনো কারণে আজ (বুধবার) তফসিল ঘোষণা না হলে বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে।
পোস্টাল ব্যালটে থাকছে না নৌকা : ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে যারা ডাকযোগে ভোট দেবেন, তাদের ব্যালটে নিবন্ধন স্থগিত থাকা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক থাকছে না। মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘চূড়ান্ত পোস্টাল ব্যালটে নিষিদ্ধ বা স্থগিত কোনো দলের প্রতীক থাকবে না।’
জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ২০০৮ সালে বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন থেকে এ পর্যন্ত ৫৯টি দল নিবন্ধন পেয়েছে। এর মধ্যে স্থগিত রয়েছে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন; বাতিল হয়েছে ফ্রিডম পার্টি (কুড়াল), ঐকবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন (চাবি) ও পিডিপির (বাঘ) নিবন্ধন।
বাতিল হওয়া দলগুলোর প্রতীকের বিষয়ে ইসি ইসি আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘যেসব দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, তাদের প্রতীক ইসির অধীনে রয়েছে। তাই এসব প্রতীক পোস্টাল ব্যালটে রাখতে বাধা নাই।’
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য এবার ১১৮টি প্রতীক চূড়ান্ত করা হয়েছে। পোস্টাল ব্যালট ভোটের আগেই পাঠানোর দরকার হওয়ায় তাতে সব প্রতীকই রাখা হচ্ছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনে আসনভিত্তিক দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামসহ প্রতীক রাখা হয় ব্যালট পেপারে। তবে পোস্টাল ব্যালটে থাকবে কেবল প্রতীক থাকবে। অ্যাপে বা ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থী দেখে প্রতীকে টিক/ক্রস দিতে হবে।