
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের আলোচনার তর্কবিতর্ক হতাশা তৈরি করেছে। গণতন্ত্রে তর্কবিতর্ক থাকবেই। তবে মাঝেমধ্যে তা হতাশার জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেড় বছরে সেই ক্ষতি পূরণ হবে, এমনটা ভাবা যাবে না।
শনিবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে অর্পণ আলোক সংঘ কর্তৃক আয়োজিত ‘সামাজিক সুরক্ষা কতটা সুরক্ষিত?’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রের সিস্টেমটাই দখলের হয়ে গেছে। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাজ নিয়ে নিয়েছেন সংসদ সদস্য; যেটা তার কাজ নয়। আইন প্রণয়নের বদলে রাস্তা উন্নয়ন, ভবন উন্নয়ন, এমনকি গাড়ি কেনা হবে কি না, সেটা নিয়েও কথা বলেছেন তারা। রাষ্ট্রের সিস্টেমটাই হয়ে গেছে দখলের।
তিনি আরও বলেন, আমলারা সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায়িত্বরত উপদেষ্টারাও অসহায় হয়ে পড়ছেন। একজন মফস্বলের শিক্ষককে সমস্যা সমাধানের জন্য ঢাকায় আসতে হয়। এটার তো প্রয়োজন ছিল না। এর জন্য দায়ী সিস্টেম। মফস্বলের শিক্ষক যদি সেন্ট্রালে না আসেন, তাহলে ঘুসটা আসবে কোথা থেকে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুস দিয়ে, স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ হয় ঘুস দিয়ে, নার্সদের নিয়োগ হয় ঘুস দিয়ে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন একটা প্রগতিবাদী সমাজ দেখতে চাই, একটা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা চাই, যখন জনগণের বৈষম্য কমিয়ে আনতে চাই... তখন দেখি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ভিন্ন চিন্তা করা হচ্ছে, ডাইভার্ট করার চেষ্টা হচ্ছে মানুষের চিন্তা ভাবনাগুলো এবং উগ্রবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রকাঠামোয় সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে বা জোড়াতালি দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট চিন্তা ও লক্ষ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, কৃষি—কোনোটিই বিচ্ছিন্ন নয়। এ সবকিছুই রাষ্ট্রকাঠামোর ওপর নির্ভর করে। জনগণ কাদের নির্বাচিত করছেন; যাদের নির্বাচিত করছেন, তারা কীভাবে দেশকে পরিচালনা করছেন—এসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
আলোচনা সভায় প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।