অনলাইন সংস্করণ
১৭:৫৮, ২৮ আগস্ট, ২০২৫
কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে সংবিধানের ওপর প্রভাব বিস্তার করা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, সংবিধান পরিবর্তনের অধিকার শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের। দেশবাসী একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সেই নির্বাচন হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ভবিষ্যতের সংবিধান নির্ধারণ করবেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার একটি ‘জুলাই সনদ’ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে যে সনদ গৃহীত হবে, সেটি নাকি সংবিধানের ওপরে স্থান পাবে। এটি তো কখনো হতে পারে না। সারা পৃথিবীতে সংবিধান প্রণয়ন করেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে, ভবিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ তাই হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। শেখ হাসিনা তার ফ্যাসিবাদী শাসন দিয়ে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
নিজের মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৭১ সালে আমি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ছিলাম। আমার অধীনে ৮০০ সৈনিক ছিল, যাদের অনেকেই ছাত্র। দেড় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে ১০০ জন শহীদ হয়েছে। আজও তাঁদের মুখ আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অথচ এ আত্মত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন এই রাষ্ট্রে হয়নি।
জামায়াত ও নতুন গড়ে ওঠা কয়েকটি দল প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন বলেন, একটি দল স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে, আরেকটি ১৯৪৭-এর বিরোধিতা করেছে। এরা আজ জনগণের মালিক সাজতে চায়। তারা জানে নির্বাচনে তাদের কোনো সুযোগ নেই, তাই শুধু বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই ব্যস্ত।
জামায়াতকে একসময় জোটে নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা এত বছর জামায়াতকে আশ্রয় দিয়েছি, এমনকি তাদের মন্ত্রী বানিয়েছি। অথচ এখন তারাই বিএনপিকে আক্রমণ করছে।
পিআর পদ্ধতির নির্বাচন প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন বলেন, পিআর পদ্ধতির কথা বাংলাদেশের মানুষ চিনেই না। বিদেশি কনসেপ্ট। পাকিস্তানে নেই, ভারতে নেই, যুক্তরাজ্যে নেই, যুক্তরাষ্ট্রে নেই, কোথাও নেই। দুই একটা দেশে থাকতে পারে, আরও অনেক দেশে থাকতে পারে, যেখানে গণতন্ত্র অন্যরকম, শিক্ষাব্যবস্থা অন্যরকম, কালচার অন্যরকম, তাদের শিক্ষাব্যবস্থা অন্যরকম। ইসরাইলে আছে এ ধরনের।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ একজন নেতাকে খুঁজে বেড়ায়, যার কাছে তারা আশ্রয় নিতে পারে, যিনি তাদের আপদ-বিপদে রক্ষা করবেন, এলাকার উন্নয়ন করবেন। সেজন্য একজন ব্যক্তিকে তারা খোঁজে। কিন্তু যদি পিআর পদ্ধতিতে এমপি হয়, তাহলে সে ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন হতে পারে যে এলাকা নির্বাচন এলাকা, সেখানকার কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হতে পারবেন না।
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে যে সেনাবাহিনী দেখেছি, সেই সেনাবাহিনী চাই। হাসতে হাসতে জীবন দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। শুধু সেতু বানানো বা রাস্তা করার সেনাবাহিনী দিয়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব নয়। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে পুরো জাতিকে মুক্তিযোদ্ধা চেতনায় উজ্জীবিত করা হবে, ছাত্রসমাজকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের হুমকি ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে সেনাবাহিনীকে আক্রমণাত্মক মনোভাবে প্রস্তুত করতে হবে, যাতে কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের দিকে রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে।