ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভোটের প্রচারে সরগরম ঢাবি জাবি ও রাবি ক্যাম্পাস

সবার দৃষ্টি তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে

* ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাবি এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা * ডাকসু নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন মাহিন, সমর্থন দিলেন বাকেরকে * আবদুল কাদেরের পাশে থাকার আশ্বাস ছাত্রদল সভাপতির * একটি গোষ্ঠী আমাদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং করছে : আবিদুল ইসলাম * আবাসন-খাবারের মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেব : সাদিক কায়েম * রাকসু নির্বাচনে ২৩ পদে মনোনয়নপত্র তুলেছেন ৩৯৫ জন * জাকসুতে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ
সবার দৃষ্টি তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর এবার ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৬২ জন। এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচন আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। সবার দৃষ্টি এখন এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের দিকে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আগামী ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী ৮ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ৮টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথগুলোতে সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। প্রবেশপথগুলো হচ্ছে- শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেখিয়ে প্রবেশের সুযোগ পাবেন।

প্রশাসন আরও জানায়, শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরিসেবায় নিয়োজিত যানবাহন, যেমন- অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, রোগীবাহী গাড়ি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের অনুমতি পাবে। তবে অন্যান্য যানবাহনের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে। নির্বাচনকালীন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্য যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়, তারা জরুরি প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া করতে চাইলে প্রক্টর অফিস থেকে নিরাপত্তা পাস সংগ্রহ করতে হবে। এ বিষয়ে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, ডাকসু নিবার্চনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদ থেকে সরিয়ে দাঁড়িয়েছেন মাহিন সরকার। একই পদে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বাকের মজুমদারকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিন প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এনসিপি নেতা মাহিন সরকার বলেন, সব জায়গায় গণঅভ্যুত্থানের শক্তিসমূহের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন। সেজন্য আমি মনে করি, অভ্যুত্থানের প্রথম সারির কেউ যদি ডাকসুতে নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলে যে কারোর চেয়ে তিনি বেশি দায়বদ্ধ থাকবেন। আবু বাকের মজুমদার অভ্যুত্থানের একজন অগ্রসেনানী। তিনি যদি বিজয়ী হন, সেটা আমার বিজয় বলে সূচিত হবে। আমি আমার সমর্থন আবু বাকের মজুমদারের প্রতি ব্যক্ত করছি। ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী হয়েছিলেন মাহিন সরকার। এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে এনসিপি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মাহিন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। সেই আন্দোলনের সাবেক নেতাদের উদ্যোগে গঠিত নতুন সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এবার ডাকসু নির্বাচনে ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে প্যানেল দিয়েছে।

অন্যদিকে ‘ডাকসুতে জিতা লাগবে না, শুধু বেঁচে থাকতে চাই’- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের প্রার্থী আবদুল কাদেরের এমন আবেগঘন ফেসবুক পোস্ট সামাজিকমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে ছাত্রদল কাদেরের পাশে থাকবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। নিজের ফেসবুক পোস্টে রাকিবুল ইসলাম লিখেছেন, ‘কাদের তোমাকে কথা দিচ্ছি, রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বংশধরদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তোমার পাশে সর্বাত্মকভাবে থাকবে, ইনশাআল্লাহ। আলবদর বাহিনীর কমান্ডারদের আসল চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে। সাইবার বুলিংয়ের জন্য প্রশিক্ষিত শিবিরের নেতাকর্মী, গুপ্তবাহিনী, সমর্থক, সাথীবৃন্দ, জনশক্তি দ্বারা শুধু সচেতন নারী নেতৃত্বই নয়, বিরোধী মতাদর্শের সবাই ধারাবাহিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের চিহ্নিতপূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতেই হবে, সেই দাবি করছি। সময়ের পরিক্রমায়, অপরাধীদের বিচার সুনিশ্চিত।’

আবদুল কাদের তার পোস্টে অভিযোগ করেন, রাজাকার নিয়ে কথা বলার কারণে তাকে নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শুধু অনলাইনেই নয়, বাড়িতে গিয়ে তার মাকেও কথা শোনানো হচ্ছে। এখন তিনি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ অবস্থা তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার ডাকসুতে জিতা লাগবে না, শুধু বেঁচে থাকতে চাই। এতটুকু দয়া অন্তত আমাকে দেখানোর অনুরোধ।’ আবদুল কাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সমন্বয়ক হিসেবে ৯ দফা ঘোষণা করে পরিচিত হয়ে ওঠেন। গত বছর সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় সাত সমন্বয়ককে যখন আটক করে ডিবি কার্যালয়ে ধরে নেওয়া হয়েছিল, সে সময় সংবাদমাধ্যমে কাদেরের পাঠানো বার্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি জানানো হতো। আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সরকারের পতনের পর অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা ছাত্রদের নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক হন আবদুল কাদের। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের ২০১৮-১৯ সেশনের আবাসিক শিক্ষার্থী।

একটি গোষ্ঠী আমাদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং করছে- আবিদুল ইসলাম : রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচারে নেমেছে ও সাইবার বুলিং করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদল-সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম। বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়েও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেন তিনি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে আবিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। পরে তিনি ওই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রচার চালান। আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই আশা রাখছি। কিন্তু শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যে জায়গাটাতে আমরা কনসার্ন জানিয়ে আসছি, সেটি হচ্ছে সাইবার বুলিং।’

প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব উল্লেখ করে আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সব প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে আমরা জানিয়েছি, যদি আপনারা এই সাইটগুলো বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে গোটাজাতিকে আপনারা সেটি জানান যে, আসলে সেটি আপনারা পারছেন না। কারণ, ডাকসু নির্বাচন এখন আর শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নয়, গোটা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার বিষয়। গোটা বাংলাদেশের স্বার্থ এখানে জড়িত।’

সাইবার বুলিং বন্ধ করতে রাষ্ট্রকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করতে হবে বলে মনে করেন আবিদুল ইসলাম। অনলাইনে যে অপপ্রচার চলছে, সেই ব্যাপারে পুরো জাতিকে সতর্ক করতে হবে, বলেন তিনি। ছাত্রদলের এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘আমরা যখন প্রচারে যাচ্ছি, অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। এত দিন পরে এসে মনে হচ্ছে, আসলেই সঠিক ছাত্ররাজনীতির চর্চাটা করছি। শ্রদ্ধা, স্নেহ, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও জবাবদিহির আওতায় ছাত্ররাজনীতি করছি।’

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারকে সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাহিন সরকারের সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া জানার পর তাঁরা এটি নিয়ে মন্তব্য করবেন।

আবাসন-খাবারের মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেব- সাদিক কায়েম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিজয়ী হলে আবাসন সংকট নিরসন এবং খাবারের মানোন্নয়নে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্বাচনি প্রচারণার সময় এসব প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সাদিক কায়েম ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের পক্ষ থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শতবর্ষ অতিক্রম করলেও শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যাগুলোর কোনো টেকসই সমাধান হয়নি। বিশেষ করে আবাসন সংকট এখনও প্রকট। আমরা দায়িত্ব পেলে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রণয়ন করব, যাতে আবাসন সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান সম্ভব হয়।

সাদিক আরও জানান, এর আগেও তিনি আবাসন ব্যবস্থার সংস্কারে একটি প্রস্তাবনা জমা দিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার মেয়েদের জন্য বিশেষ আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, যেসব ছাত্রী হলে সিট পাচ্ছেন না, তাদের জন্য বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এটি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব।

খাবারের মান নিয়েও বক্তব্য দেন সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, হলের খাবারের মান বর্তমানে সন্তোষজনক নয়। আমরা খাদ্যমান উন্নয়নে নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করব। দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা আনা হবে এবং ‘মিল ভাউচার’ সিস্টেম চালু করা হবে, যেন কেউ অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে না হয়। নির্বাচনি প্রচারণার সময় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ই হবে তাদের মূল লক্ষ্য। এক নেতা বলেন, আমরা প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতে চাই না। বরং শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা বাস্তবায়নে ডাকসুর অবস্থানকে কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

সাদিক কায়েমের মতে, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবসংকট বিবেচনায় নিয়ে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই দায়িত্ব পেলে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

রাকসু নির্বাচনে ২৩ পদে মনোনয়নপত্র তুলেছেন ৩৯৫ জন : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণের সময় শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রাকসুতে ২৩টি পদের বিপরীতে ৩৯৫ জন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৮৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। হল সংসদ নির্বাচনে ৭৫৪টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রথম দিনে জমা পড়েছে ২৯টি। প্রথম দিন হওয়ায় এদিন সেভাবে মনোনয়ন দাখিল করতে আসেননি প্রার্থীরা। যদিও নির্বাচন কমিশনার বলছেন, ৭ তারিখের মধ্যে সবাই মনোনয়নপত্র জমা দেবে বলে আশা করছি। রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, রাকসু নির্বাচনের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ১৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১০ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। রাকসুর অন্যান্য পদের মধ্যে ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে ৮ জন, সহকারী ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক ৮ জন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৫ জন ও সহকারী সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ৭ জন, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৫ জন ও সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৪ জন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৯ জন ও সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এছাড়া মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৭ জন ও সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৪ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৩ জন ও সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৬ জন, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৩ জন এবং সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৪ জন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ১৩ জন ও সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ১১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে; যেখানে ৪ পদের বিপরীতে ৫১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ২৯ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার করা হয়েছে। আশা করছি, এখন নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রাধ্যক্ষ পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয় সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭টি আবাসিক হল আছে। এর মধ্যে ছাত্র হল ১১টি এবং ছাত্রী হল ৬টি। হল সংসদের ১৫টি পদে ১৭টি হলে মোট মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে ৭৫৪টি। এর মধ্যে জুলাই-৩৬ হলে ৪২টি, রোকেয়া হলে ৩০টি, মন্নুজান হলে ৪০টি, বেগম খালেদা জিয়া হলে ২৫টি, তাপসী রাবেয়া হলে ৩৮টি, রহমতুন্নেছা হলে ৩৫টি, শেরেবাংলা হলে ৫০টি, হবিবুর রহমান হলে ৫৩টি, মাদার বখ্শ হলে ৫০টি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৬২টি, মতিহার হলে ৫৫টি, বিজয়-২৪ হলে ৪০টি, সৈয়দ আমীর আলী হলে ৪৮টি, নবাব আব্দুল লতিফ হলে ৩৬টি, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ৪৬টি, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ৫৪টি এবং শাহ মখদুম হলে ৫০টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে।

জাকসুতে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : জাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটারদের উপঢৌকন প্রদান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাম সমর্থিত প্যানেল-সংশপ্তক পর্ষদের এজিএস প্রার্থী সোহাগী সামিয়া। ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা নারী প্রার্থীদের সাইবার বুলিং করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে, ছাত্রশিবির প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেছেন, সাইবার বুলিংয়ের সত্যতা থাকলেও এর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা জড়িত নয়। সকালে নতুন কলাভবন চত্বরে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলন করেন সংশপ্তক পর্ষদের প্রার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা খরচ করতে পারলেও অনেক প্রার্থী প্রতি ঘণ্টায়ই তা ব্যয় করছেন। আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা মব সৃষ্টি করে প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে, এসব ঘটনায় ছাত্রশিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করেছেন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ। তিনি জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। প্রত্যুত্তরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার দাবিও করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) কেন্দ্রীয় কমিটি ও হল সংসদসমূহের নির্বাচন ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যেটি ছিল ১৯৯০-এর পর প্রথম ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নুরুল হক নূর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এদিকে, দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হলেও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রতিদিনই বাড়ছে। অন্যদিকে, ১৯৯০ সালের পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) নির্বাচন।

ডাকসু নির্বাচন,রাকসু নির্বাচন,জাকসু নির্বাচন,ছাত্র সংসদ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত