অনলাইন সংস্করণ
১৪:৩৯, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে এবং সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদ ও মৌলবাদের হাত থেকে যদি দেশকে রক্ষা করতে চান, তাহলে জনগণের জন্য রাজনীতি করুন। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার জন্য পাগল হবেন না। যদি নিঃস্বার্থভাবে গণতন্ত্র উপহার দিতে চান, দেশকে একটি জায়গায় আনতে চান, তাহলে আগে নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করেন। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারবেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জুলাই বিপ্লব এবং আগামীর গণতন্ত্র ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের অবস্থা হচ্ছে এমন, মুসল্লির চেয়ে ইমাম বেশি। আমরা বোধ হয় সেই অবস্থায় আসছি এখন। জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা একেকজনের একেক রকম। আমার মনে হয় জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ৫ আগস্টের পর ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। একসঙ্গে থাকলাম, একসঙ্গে জেল খাটলাম, এখন যার যার ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য আমরা আগের মতো এক সুরে কথা বলতে পারি না।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপিকে ভারতের দালাল বলা শুরু হয়েছে। যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছেন, তারা নতুন করে আবার বৈষম্যের সৃষ্টি করছেন। তাহলে আমরা কী স্বপ্ন দেখলাম, আর আমরা কোনো পথে এগোচ্ছি?
বিএনপির এই নেতা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন লেখা নেই। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ লেখা আছে ৯০ দিন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ হলো অনন্তকাল। যতদিন থাকবে, ততদিন এটা বৈধ। যদি তাই না হয়, একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের আকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের কেন সময় হয় না।
যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারে তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) দুই বছর লাগে কেন?—এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মৌলবাদীরা বেহেস্তের টিকেট বিক্রি করছে। অর্থাৎ, তাদের সঙ্গে থাকলে আপনি বেহেস্তে যাবেন, না থাকলে দোজখে যাবেন। আর নিজেরা বেহেস্তে যাবে কি না, সে কথা তারা জানে না। আমি বলবো সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছে। আমরা ফ্যাসিবাদের থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে এখন সাম্প্রদায়িক উগ্র-উন্মাদনার সৃষ্টি শুরু হয়েছে। যেটার মাধ্যমে মব তৈরি হয়।
তিনি বলেন, আমরা যদি গণতন্ত্রের পথে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে না রাখতে পারি, তাহলে সাম্প্রদায়িকতা হলো ফ্যাসিবাদের চেয়ে দ্বিগুণ কঠিন ও জনবিরোধী। এই আধুনিক বিশ্বে মুক্তচিন্তা, প্রতিভার বিকাশ তারা করতে দেবে না।
তিনি আরও বলেন, ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রব্যবস্থার কোনো সাংঘর্ষিক ব্যাপার নেই, অপব্যাখ্যা আছে। এই অপব্যাখ্যার কারণে মানুষ ন্যায়ের কথা বলতে পারে না। অনেকগুলো দল আছে যারা ট্র্যাভেল এজেন্সির মতো বেহেস্তের টিকেট বিক্রি করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের গান গাইতে গাইতে অনেক কুসংস্কার করে দিচ্ছে। হায়ার করে বিদেশ থেকে বুদ্ধিমান লোক আনা হয়েছে। আর এত বুদ্ধিমান লোক এক জায়গায় হলে যা হয়, তাই হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ৩১ দফার ভিত্তিতে প্রায় ৬০টি দল একত্রিত হয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। সেই ৩১ দফায় পিআর শব্দটি ছিল না। গণতন্ত্রের জন্য যদি এটা জরুরি হতো, তাহলে আজ যারা পিআরের কথা বলছেন, তারা তো ৩১ দফায় মতামত দিয়েছেন।