ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নব উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক

নব উদ্যমে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ন্যাশনাল ব্যাংক

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে চার দশকের ঐতিহ্যবাহী নাম ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি। ১৯৮৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক দেশের প্রথম দেশীয় মালিকানায় বেসরকারী ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক সুপ্রতিষ্ঠিত ও ঐতিহ্যবাহী একটি ব্যাংকের নাম। দীর্ঘ সময়ের সফল পথচলার পর সাম্প্রতিক সময়ে নানা প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে ব্যাংকটি এখন নতুন নেতৃত্ব, দূরদর্শী নীতি এবং আধুনিক কৌশলের সমন্বয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল চৌধুরীর নেতৃত্বে ব্যাংকটি আমানত সংগ্রহ ও ঋণ আদায়ের পাশাপাশি ননফান্ডেড ব্যবসায়ও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বর্তমানে ব্যাংকটি সারাদেশে ২২১টি শাখা ও ৬৫টি উপশাখার মাধ্যমে তার ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আমানত সংগ্রহে চমকপ্রদ সাফল্য:

গত জুলাই–সেপ্টেম্বর ২০২৫ সময়কালে ন্যাশনাল ব্যাংকে ৪৬,২৮১ নতুন আমানত হিসাব খোলা হয়েছে। এই নতুন হিসাবসমূহের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১,৮৮২.২৩ কোটি টাকা। এছাড়া গত তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫) ব্যাংকে টাকার প্রবাহ ছিল ৫,৪২০.৩৮ কোটি টাকা। উপরন্তু বছরের শেষ তিন মাসে নতুন আরো ২,০০০ কোটি টাকার নতুন ডিপোজিট আসবে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত অল্প সময়ে এই অর্জন প্রমাণ করে যে গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংকের প্রতি নতুন করে আস্থা ফিরেছে। নতুন ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা, গ্রাহকসেবায় গতি এবং প্রযুক্তিনির্ভর সুবিধা এই আস্থা সৃষ্টির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।

রেমিট্যান্স সেবা প্রদানে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবদান:

ন্যাশনাল ব্যাংক প্রবাসী বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কাছে এক আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশে অবস্থিত ন্যাশনাল ব্যাংকের শতভাগ মালিকানাধীন সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ২১টি শাখা, ২৫% মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ১৭টি শাখা এবং ব্যবস্থাপনা চুক্তির আওতায় ১১টি শাখা সহ মোট ৪৯টি শাখার মাধ্যমে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, গ্রিস, কাতার সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। জানুয়ারি ২০২৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ৩ লক্ষ গ্রাহককে নিরবিচ্ছিন্ন রেমিট্যান্স সেবা প্রদান করেছে। যা ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের অনন্য আস্থার প্রতিফলন।

রেমিট্যান্স সেবায় ন্যাশনাল ব্যাংকের অর্জন:

রেমিট্যান্স সেবায় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২৪-২৫ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক ৩টি রেমিট্যান্স পদক অর্জন করেছে। সেগুলো হলো- ১. আমেরিকার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেমিট্যান্স মেলায় পাওয়া "টপ রেমিট্যান্স ব্যাংক রিসিভ-২০২৪", ২. ন্যাশনাল রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ ও ৩. টপ টেন ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড-২০২৪। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ নভেম্বর "শীর্ষ রেমিট্যান্স ব্যাংক গ্রহীতা ২০২৪" হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

আকর্ষণীয় ডিপোজিট প্রোডাক্ট:

ন্যাশনাল ব্যাংক আমানতকারীদের জন্য চালু করেছে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ডাবল বেনিফিট স্কিম, যাতে সাড়ে ৬ বছরে জমাকৃত অর্থের দ্বিগুণ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে মাসিক আয় স্কিম, স্বাধীনতা দ্বিমাসিক সঞ্চয় স্কিম, সেঞ্চুরি ডিপোজিট স্কিম, এনবিএল দেড়গুণ, ন্যাশনাল মাসিক সঞ্চয় স্কিম, এনবিএল হাইব্রিড স্কিম, মিলিয়নিয়ার ডিপোজিট স্কিম, তিনগুণ মুনাফা স্কিম, এনবিএল নিশ্চিন্ত অবসর স্কিম সহ আরো অনেক আকর্ষণীয় স্কিম।

ক্রেডিট কার্ডে পাইওনিয়ার:

ন্যাশনাল ব্যাংকের অগ্রযাত্রায় কিছু যুগান্তকারী ও অভূতপুর্ব সাফল্য অর্জন করা হয়েছিল যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দেশি ব্যাংক হিসেবে প্রথম মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড চালু করে ন্যাশনাল ব্যাংক। বর্তমানে বেশ কিছু আকর্ষণীয় অফার ন্যাশনাল ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে রয়েছে এবং শীঘ্রই আরো কিছু ফিচার কার্ডে যোগ হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া মাস্টারকার্ড থেকে ২০২৪ সালে দুটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংকের পাওয়া পুরস্কার দুটি হলো এক্সিলেন্স ইন মাস্টারকার্ড ডেবিট বিজনেস (ডোমেস্টিক) ও এক্সিলেন্স ইন মাস্টারকার্ড ডেবিট বিজনেস (ইন্টারন্যাশনাল)। এছাড়া “মাস্টারকার্ড হলিডে ক্যাম্পেইন ২০২৫”-এর শীর্ষ ৫০জন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের।

ঋণ আদায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি:

ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি শুধুমাত্র নতুন আমানত সংগ্রহেই নয়, বরং খেলাপী ঋণ পুনরুদ্ধারেও সফলতা অর্জন করছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি আদায় করেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫ এ খেলাপী ঋণ আদায় হয়েছে ২১১ কোটি টাকা, যা বছর শেষে ১,৩০০ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া খেলাপী ঋণ আদায় ও নিয়মিতকরণের ক্ষেত্রে জোর প্রচেষ্টার অব্যাহত রয়েছে।

ননফান্ডেড ব্যবসায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি:

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে, এবং এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ফান্ডেড ব্যবসার পাশাপাশি ননফান্ডেড খাতেও ন্যাশনাল ব্যাংক এখন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। লেটার অব ক্রেডিট (এলসি), ব্যাংক গ্যারান্টি ও অ্যাকসেপ্টেন্স খাতে ব্যাংকটির ধারাবাহিক উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে লেটার অব ক্রেডিট খাতে ত্রৈমাসিক হিসেবে এপ্রিল-জুন ২০২৫ থেকে জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার ৫৫%। ব্যাংক গ্যারান্টি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬ শতাংশ এবং একই সময়ে অ্যাকসেপ্টেন্স ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশ। যা দেশের আমদানি ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং এর পাশাপাশি দেশের শিল্প ও অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এছাড়া নন ফান্ডেড ব্যবসা বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকের কমিশন ভিত্তিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকের তারল্য খাতে সহায়তা করছে।

প্রিফান্ডেড অনলাইন ট্রানজেকশন:

আগস্ট ২০২৫ থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের সকল শাখায় প্রিফান্ডেড অনলাইন ট্রানজেকশন সুবিধা চালু রয়েছে এবং ব্যাংক কাউন্টারে গ্রাহকদের এই সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিল চৌধুরী বলেন, “আমরা ব্যাংকের জন্য সহজ ও গ্রাহকবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করার পরিকল্পনা নিয়েছি। লক্ষ্য একটিই—আস্থা, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিনির্ভর সেবার মাধ্যমে দেশের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাংক হিসেবে নিজেদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করা। ব্যাংকের চেয়ারম্যান জনাব আবদুল আউয়াল মিন্টু সহ পরিচালনা পর্ষদের সহযোগীতা ও দিকনির্দেশনায় ন্যাশনাল ব্যাংককে আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাংকের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হব। আমি বিশ্বাস করি, গ্রাহকের আস্থা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই আস্থা ধরে রাখতে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি, পেশাদারিত্ব ও সঠিক কৌশলের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।” সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

নব উদ্যম,ন্যাশনাল ব্যাংক,বেসরকারী ব্যাংক,ঋণ,সাফল্য,রেমিট্যান্স সেবা,ডিপোজিট
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত