ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মিরসরাইয়ে মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ

মিরসরাইয়ে মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ

নদীর একপাড়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই, অন্য পাড়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে এ দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অনেকটা মিল থাকলেও এতদিন দুই জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা ফেনী নদী সেই মিলনে বাঁধ বেঁধেছিল। নদীর দু’পাড়ের মানুষের দূরত্ব ঘোছাতে ৫ বছর আগে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় সেতুর নির্মাণকাজ। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। পাশাপাশি সেতুর উভয়দিকের সংযোগ সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে বিলম্বের কারণে বাড়ছে দীর্ঘসূত্রিতার শঙ্খা। জটিলতা কাটিয়ে সেতুটি যান চলাচলের জন্য কবে নাগাদ প্রস্তুত হবে তা জানেনা কেউ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেনী নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতু ছাগলনাইয়া উপজেলার আলোকদিয়া ও মিরসরাই উপজেলার ধুম ইউনিয়নের মানুষের এমনই আশার প্রতীক ছিল। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরুর হওয়ার সাড়ে পাঁচ বছর পার হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ আর হতাশায় ভুগছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ফেনী নদীর উপর মিরসরাই উপজেলার ধুম ইউনিয়নের ধুম গ্রামে ২৫২ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ শুরু করে। ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হক ট্রেডার্স। ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর সেতুর উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন- তৎকালীন মিরসরাইয়ের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রকল্প অনুযায়ী ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালে এসেও কাজ শেষ হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর মূল অবকাঠামোর প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ এরইমধ্যে শেষ হলেও সেতুর দু’পাশের সংযোগ সড়কের কাজ এখনও শুরুই হয় নি। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় এ কাজ ঝুলে রয়েছে। ফলে সেতুটি চালু হতে আরও সময় লাগতে পারে।

বর্তমানে স্থানীয়রা ছোট ডিঙি নৌকায় নদী পার হচ্ছেন। জনপ্রতি গুণতে হচ্ছে ১০ টাকা করে। শুষ্ক মৌসুমে নদী পারাপার কিছুটা সহজ হলেও বর্ষাকালে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চরমভাবে। নদীর পানি বাড়লে অনেক ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়, যা সময় ও অর্থ দুটোই ক্ষয় করছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগী মাজহারুল ইসলাম বলেন, শুরুতে মাত্র ২ টাকা দিয়ে নৌকায় পারাপার হতাম, এখন লাগে ১০ টাকা। এত বছর ধরে সেতুর কাজ চলছে, তবুও শেষ হয়নি। আসা-যাওয়া এখন অনেক কষ্টের। সেতুটা শেষ হলে আমাদের জন্য নিরাপদ হতো।

আরেকজন ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বাড়ি বড়দারোগার হাটে, কিন্তু মেয়ে থাকে ছাগলনাইয়ার আলোকদিয়ায়। তাই প্রায়ই এই নদী পার হতে হয়। বৃষ্টির দিনে নৌকা পাওয়া যায় না, আবার সন্ধ্যার পরেও নৌকা চলে না। সেতুটা হয়ে গেলে শান্তিরহাট ও আলোকদিয়া বাজার আরও উন্নত হবে, বাড়বে কেনাবেচা।

সেতুর কাজ বিলম্বিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, মূলত সেতুর দু’পাশের জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় কাজ আটকে আছে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হলে আগামী এক বছরেও কাজ শেষ হবে না।

হক ট্রেডার্সের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন, নদীতে পাইলিংয়ের সময় নিচে কিছু অবাঞ্ছিত পদার্থ পড়েছিল, যার ফলে বোরিং সম্ভব হয়নি। অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে। বর্তমানে প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কাজ দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। তবে সংযোগ সড়কের কাজ জমি অধিগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত