ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কথা বলার আদবকেতা

মিজান ইবনে মোবারক
কথা বলার আদবকেতা

মানুষ কথার মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে ভাব আদান-প্রদান করে। সুন্দরভাবে কথা বলা ইসলামের অনুপম শিক্ষা ও সৌন্দর্য। সঠিক ও সুন্দরভাবে কথা বলে খুব সহজেই অন্যকে নিজের দিকে ধাবিত ও আকৃষ্ট করা যায়। আবার স্থান, কাল ও পাত্রভেদে কথা বলতে না পারায় মানুষ মানুষের থেকে দূরে সরে যায়। এ জন্য কথা বলার সময় কথা বলার আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা, কথা হলো এমন জিনিস- যা মুখ ফুটে বের হ?ওয়ার পরে আর কখনোই ফিরিয়ে আনা যায় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান হলো সেই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে।’ (তিরমিজি : ২৬২৭)।

সত্য কথা বলা : ইসলাম মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেয় না। যে মিথ্যা বলে, দুনিয়ার মানুষ তাকে ঘৃণা করে। আসমানের অধিবাসীরা?ও তাকে ঘৃণা করে তার থেকে দূরত্ব রেখে চলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন মিথ্যার দুর্গন্ধে ফেরেশতারা মিথ্যাবাদী থেকে এক মাইল দূরে চলে যায়।’ (তিরমিজি : ১৯৭২)।

বুঝেশুনে কথা বলা : বুঝেশুনে কথা বলতে হবে। দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো ফায়দা নেই- এমন কথা বলা উচিত নয়। মানুষের মুখ থেকে ভালো-মন্দ যে কথাই বের হোক না কেন, তা সংরক্ষণ করার জন্য নিযুক্ত রয়েছে ফেরেশতা। তাই ভেবেচিন্তে উপকারী ও ভালো কথা বলা এবং মন্দ কথা থেকে দূরে থাকা চাই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে কথাই মানুষ উচ্চারণ করে (তা সংরক্ষণের জন্য) তার কাছে একজন সদাতৎপর প্রহরী আছে।’ (সুরা কাফ : ১৮)।

ধীরে ধীরে কথা বলা : কথা বলার সময় তাড়াহুড়া না করা ভালো। দ্রুতগতিতে কথা বলা দোষণীয়?ও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ধীরে ধীরে কথা বলতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) এমনভাবে কথা বলতেন, যদি কোনো গণনাকারীর গণনা করতে ইচ্ছে করত, তবে সে গণনা করতে পারত।’ (মুসলিম : ৭৩৯৯)।

মধ্যম আওয়াজে কথা বলা : যতটুকু আওয়াজে শ্রোতার কাছে কথা পৌঁছায়, তার চেয়ে বেশি জোরে না বলা প্রয়োজন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমার বলার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, তোমার আওয়াজ নিচু করো; নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট আওয়াজ হলো গাধার আওয়াজ।’ (সুরা লুকমান : ১৯)।

উত্তমভাবে কথা বলা : মানুষের সঙ্গে উত্তমপন্থায় কথা বলা ইসলামের সৌন্দর্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা লোকের সঙ্গে উত্তমভাবে কথা বলবে।’ (সুরা বাকারা : ৮৩)।

বড়দের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা : পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর আওয়াজের ওপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তার সঙ্গে তেমন উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে, তোমাদের সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না। নিশ্চয়?ই যারা আল্লাহর রাসুলের কাছে নিজেদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলো তাকওয়ার জন্য বাছাই করেছেন, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।’ (সুরা হুজুরাত : ২-৩)।

বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কথা বলা : মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করার জন্য বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কথা বলার কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহ্বান করো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো। নিশ্চয়?ই একমাত্র তোমার রবই জানেন, কে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হেদায়েতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভালো করেই জানেন।’ (সুরা নাহল : ১২৫)।

মন্দ কথার প্রতিকার : মন্দ কথা ও কাজের প্রতিবাদ করা উচিত এবং তা ভালোর মাধ্যমে করতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো, তা দ্বারা যা উৎকৃষ্টতর। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।’ (সুরা হামিম আস-সাজদা : ৩৪)।

মুর্খ লোকদের সঙ্গে কথায় না জড়ানো : মুর্খ লোকদের সঙ্গে তর্কে না জড়ানো উচিত এবং এটা ইসলামের দৃষ্টিতে মোমিনের গুণ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদের সম্বোধন করে, তখন তারা বলে সালাম।’ (সুরা ফুরকান : ৬৩)।

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া রশিদিয়া এমদাদুল উলুম গৌরনদী, বরিশাল

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত