ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এতিমের প্রতি দয়ায় মেলে সওয়াব

মুফতি ওমর ফারুক আশিকী
এতিমের প্রতি দয়ায় মেলে সওয়াব

দাদার মৃত্যুর পর এতিমদের দায়িত্ব কার? ইসলাম এই বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। দাদা যদি কোনো কারণে হেবা (দান) বা অসিয়ত (উইল) করে যেতে না পারেন, তবুও এতিমরা যেন বঞ্চিত না হয়, সে বিষয়ে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা স্পষ্টভাবে বলেন, যখন সম্পদ বণ্টনের সময় আত্মীয়স্বজন, এতিম ও মিসকিন উপস্থিত হয়, তখন তাদের সেখান থেকে কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সঙ্গে সদালাপ করো। (সুরা নিসা : ৮)। এই আয়াত মুসলিম সমাজের প্রতি এতিমদের অধিকার রক্ষায় এক সুমহান বার্তা দেয়।

ইসলাম এতিম ও অসহায়দের প্রতি সহযোগিতা এবং তাদের খোঁজখবর নেওয়ার বিষয়ে যে গুরুত্ব দিয়েছে, তা অতুলনীয়। পবিত্র কোরআনে এতিমদের ধন-সম্পদ সুরক্ষা এবং তাদের প্রতি সদয় আচরণের বিষয়ে একাধিকবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, আর এতিমদের তাদের ধন-সম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং (তোমাদের) খারাপ জিনিসের বিনিময়ে (তাদের) ভালো জিনিস তোমরা গ্রহণ করো না। তা ছাড়া তোমাদের সম্পদের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাস করো না তাদের সম্পদ। নিঃসন্দেহে এটা মহাপাপ। (সুরা নিসা : ২) এই আয়াত এতিমের সম্পদে হাত দেওয়াকে মহাপাপ হিসেবে গণ্য করে, যা তাদের আর্থিক সুরক্ষায় ইসলামের কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরে।

এতিমদের প্রতি শুধু আর্থিক সাহায্যই নয়, বরং তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের দিকেও ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহতায়ালা অপর আয়াতে বলেন, এতিমরা বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমরা তাদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখো। যখন তাদের সমঝদার মনে করবে, তখন তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দেবে। (সুরা নিসা : ৬ )। এটি প্রমাণ করে যে, ইসলাম শুধু এতিমের সম্পদ রক্ষা করতে বলেনি, বরং তাদের বেড়ে ওঠা এবং পরিপক্ব হওয়ার প্রক্রিয়াতেও অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়েছে।

নবীজি মুহাম্মদ (সা.) এতিম ও অসহায়দের সাহায্য করার ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিধবা ও গরিবদের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী কিংবা রাতে ইবাদতকারী আর দিনে রোজাদার ব্যক্তির সমান মর্যাদা পায়। (বোখারি : ৫৩৫৩ )। এই হাদিসটি এতিম ও অসহায়দের সেবাকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, রাতভর ইবাদত এবং দিনের বেলা রোজা রাখার মতো মহান ইবাদতের সমতুল্য করেছে, যা এতিমদের প্রতি সহযোগিতার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

ইসলামের এই ব্যাপক নির্দেশনাগুলো থেকে এতিমদের প্রতি সহমর্মিতা, তাদের অধিকার সুরক্ষা এবং তাদের সুস্থ বিকাশে সহায়তা করার গুরুত্ব স্পষ্ট বোঝা যায়। এই নির্দেশনাগুলো যদি মুসলিম সমাজে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা হলে শুধু এতিম নয়, কোনো অসহায় ব্যক্তিই সমাজে অসহায় থাকবে না। বরং এক সহানুভূতিশীল ও সুসংগঠিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠবে, যেখানে প্রত্যেকেই অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত