ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

লজ্জার সঙ্গে ঈমানের সম্পর্ক

আম্মার আহমদ
লজ্জার সঙ্গে ঈমানের সম্পর্ক

লজ্জাশীলতা ঈমানদার নারী ও পুরুষের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম : ৫১)। আরবিতে হায়া অর্থ লজ্জা বা সংকোচ বোধ করা, ইতস্তত বোধ ইত্যাদি। সহজভাবে, লজ্জা হচ্ছে এক প্রকার মানবীয় অনুভূতি, যা মানুষকে মন্দ কাজে বাধা প্রদান করে এবং জনসম্মুখে সম্মানহানির ভয় সৃষ্টি করে। লজ্জা দুই প্রকার। যথা- ১. প্রকৃতিগত বা স্বভাবগত লজ্জা, ২. অর্জিত লজ্জা।

১. আল্লাহ প্রদত্তভাবে মানুষের মধ্যে যে লজ্জা আগে থেকেই বহাল থাকে, তাই প্রকৃতিগত বা স্বভাবগত লজ্জা। যেমন- উলঙ্গ হতে লজ্জাবোধ করা।

২. মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি ঈমান আনার পর, দ্বীনের আদব আখলাক শিষ্টাচার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের পর মানুষের মাঝে যে লজ্জার সৃষ্টি হয়, তাকে অর্জিত লজ্জা বলে। এই লজ্জাই মূলত উত্তম লজ্জা। যা মানুষকে যাবতীয় মন্দ কাজে বাধা প্রদান করে অন্যায় থেকে বিরত রাখে।

মানবজীবনে লজ্জার গুরুত্ব অনেক বেশি। লজ্জার সঙ্গে ঈমানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। লজ্জা নামক মানবীয় গুণটির কারণেই মানুষ সত্যিকার অর্থে মানুষ হতে পারে, অন্যায় থেকে বিরত থাকতে পারে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি দ্বীনেরই একটা চরিত্র রয়েছে, আর ইসলামের মূল চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা। (ইবনে মাজাহ : ৪১৮১)। যে ব্যক্তির লজ্জানুভূতি যত বেশি, তার ঈমানের জোর তত বেশি। সে ব্যক্তি তত বেশি পাপ থেকে বিরত থাকতে পারে। এই লজ্জাবোধই তাকে যাবতীয় মন্দ ও অশ্লীল কাজে বাধা প্রদান করে। ফলে সে মন্দ কাজ করতে পারে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লাজুকতা শুধু কল্যাণই বয়ে আনে।’ (বোখারি : ৬১১৭)।

অপরদিকে লজ্জাহীনতা হলো দুর্বল ঈমানের লক্ষণ। যার লজ্জানুভূতি যত কম, তার ঈমানের জোর তত কম। লজ্জাহীন ব্যক্তির কোনো কাজে বাছবিচার থাকে না। ফলে সে যেকোনো মন্দ কাজ সংকোচে ছাড়াই করে ফেলে। যে কারণে সে ধীরে ধীরে অন্যায়ের পথে ধাবিত হতে থাকে। এ বিষয়ে রাসুল (সা.)-এর বাণী, যখন তুমি নির্লজ্জ হয়ে পড়বে, তখন যা ইচ্ছা তাই করো। (বোখারি : ৬১২০)।

যার লজ্জা আছে তার সব আছে, সে তত বেশি পরিশুদ্ধ। যার লজ্জা নেই তার কিছুই নেই। এই লজ্জাহীনতার কারণেই মানুষ নানা ধরনের অন্যায়মূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে। ধাবিত হয় অশ্লীলতার পথে। যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘(হে রাসুল!) বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব অশ্লীলতা হারাম করেছেন। চাই তা প্রকাশ্যে হোক কিংবা গোপনে।’ (সুরা আরাফ : ৩৩)। পবিত্র কোরআনের অন্য আরেকটি জায়গায় ইরশাদ রয়েছে, ‘আর আল্লাহ অশ্লীলতা, মন্দ ও জুলুম থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা স্মরণ রাখতে পারো।’ (সুরা নাহল : ৯০)। লাজুকতা প্রতিটি ব্যক্তিকে পরিশুদ্ধ করে যাবতীয় অন্যায় হতে বিরত রেখে জান্নাতের পথে ধাবিত করে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানদারদের স্থান জান্নাত। অন্যদিকে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ, আর দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম।’ (তিরমিজি : ২০০৯)।

রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘লজ্জা ও অল্প কথা বলা ঈমানের দুটি শাখা। আর অশ্লীলতা ও অতিরিক্ত কথা মুনাফিকির দুটি শাখা।’ (তিরমিজি : ২০২৭)। আল্লাহ আমাদের সবাইকে লজ্জাশীল হওয়ার তৌফিক দান করুন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত