ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলুম-অত্যাচারের ভয়াবহ পরিণাম

মাবরুর আহমাদ
জুলুম-অত্যাচারের ভয়াবহ পরিণাম

জুলুম বা অত্যাচার একটি সামাজিক ব্যাধি। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এটি। জুলুমের কারণে অতীতে বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। জুলুম হচ্ছে অন্যের মালিকানায় হস্তক্ষেপ বা সীমালঙ্ঘন করা। অনুরূপভাবে অন্যের হক নষ্ট করলে কিংবা কারও সম্পদ জবরদখল করলেও জুলুম হয়। অধীনস্থদের কাউকে অধিক কাজের দায়িত্ব দেওয়া এবং কাউকে ছাড় দেওয়া; কারও দোষ-ত্রুটি এড়িয়ে যাওয়া এবং কারও দোষ-ত্রুটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ধরা কিংবা কর্মীদের মাঝে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করাও জুলুম হয়। এগুলো মানুষকে কষ্ট দেওয়ার একটি অন্যতম মাধ্যম। যে ব্যক্তি জুলুম করে তাকে বলা হয় ‘জালিম’ আর যার প্রতি জুলুম করা হয় তাকে বলা হয় ‘মজলুম’। জুলুমের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘বস্তুত তোমাদের মধ্যে যারা সীমালঙ্ঘন করবে, আমরা তাদের বড় শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাব।’ (সুরা ফুরকান : ১৯)। তিনি আরও বলেন, ‘আর জালেমদের কোনো বন্ধু নেই বা কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা সুরা : ৮)

জুলুম করাকে আল্লাহ তাঁর নিজের ওপর হারাম করেছেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ, আমি আমার ওপর জুলুম করাকে হারাম করে দিয়েছি। তাই আমি তোমাদের জন্যও জুলুম করা হারাম করে দিলাম। অতএব, তোমরা পরস্পরের প্রতি জুলুম করো না।’ (মুসলিম : ২৫৭৭)। আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত আবু মূসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ জালিমদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন তাকে ধরেন, তখন আর ছাড়েন না। এরপর নবী করিম (সা.) এ আয়াত পাঠ করেন, ‘আর এরকমই বটে আপনার রবের পাকড়াও, যখন তিনি কোনো জনপদবাসীকে পাকড়াও করেন তাদের জুলুমের দরুন। নিঃসন্দেহে তার পাকড়াও বড় যন্ত্রণাদায়ক, অত্যন্ত কঠিন।’ (বোখারি : ৪৬৮৬)। অপর একটি হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর জুুলুম করেছে সে যেন তার কাছ থেকে ক্ষমা নিয়ে নেয়। তার ভাইয়ের পক্ষে তার কাছ থেকে পুণ্য কেটে নেওয়ার আগেই। কারণ সেখানে কোনো দিনার বা দিরহাম নেই। তার কাছে যদি পুণ্য না থাকে তবে তার (মজলুমের) গোনাহ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ২৪৪৯)।

জুলুমণ্ডনির্যাতনের শিকার হয়ে মানুষ অনেক সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিকে কিছু বলতে পারে না, তার প্রতি কৃত জুলুমের প্রতিকার করতে পারে না, নিতে পারে না প্রতিশোধ। পেশিশক্তি, বাহুবল, জনবল ও অর্থ-বিত্তের প্রভাবে অনেক মানুষ নীরবে অশ্রু ঝরায়, কেঁদে-কেটে ন্যায়বিচারক মহান আল্লাহর কাছে তার মনের আকুতি পেশ করে ও বিচার দায়ের করে। আল্লাহও তার দোয়া কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আর মজলুমের বদদোয়া থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা তার (বদদোয়া) এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (মুসলিম : ১৯)। অপর হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না; ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, রোজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং মজলুমের দোয়া। এ শ্রেণির মর্যাদা এই যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তা মেঘমালার ওপর তুলে রাখবেন এবং তার জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে। আর আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জতের কসম, একটু পরে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব।’ (ইবনে মাজাহ : ১৭৫২)।

আমাদের উচিত জুলুম থেকে আত্মরক্ষা করা। জালেমকে অত্যাচার থেকে বিরত রেখে সাহায্য করা। মজলুমকে সবধরনের প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে সাহায্য করা। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইকে সাহয্য করো, সে জালেম হোক বা মাজলুম। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, মজলুমকে সাহায্য করব, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জালেমকে কী করে সাহায্য করব? তিনি বলেন, তুমি তার হাত ধরে তাকে জুলুম থেকে বিরত রাখবে। (বোখারি : ২৪৪৪)।

জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহতায়ালা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কেয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহতায়ালা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহতায়ালা আখেরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)। সুতরাং দুনিয়ার জালেমদের সাবধান হতে হবে। পরকালের কঠিন আজাবকে ভয় করুন। মজলুমদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিন। অন্যথা পরকালে ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত