ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অন্যের কথা শোনার গুরুত্ব

আবিদ আম্মার
অন্যের কথা শোনার গুরুত্ব

ইসলামের সব বিধি-বিধান আদবের মোড়কে মোড়ানো। প্রতিটি জিনিসের আছে শিষ্টাচার। এসব শিষ্টাচার বা আদব মেনে চলার মধ্যে সবার জন্যই কল্যাণ। আমরা প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে কথা বলি ও শুনি। এই কথা বলার যেমন আদব রয়েছে, তেমনি শোনারও আদব রয়েছে। শ্রবণ দক্ষতা অর্জন করার জিনিস। এর মধ্যেও আলোচকের হক আছে। কিন্তু আমাদের এসব কল্পনায়ও আসে না।

নিচে আমরা সেসবের কয়েকটি নিয়ে আলোচনা করব

এক. আদর্শ শ্রোতা হওয়া। শোনার সর্বপ্রথম হক হচ্ছে চুপ থাকা এবং আলোচনাকারীর কথা মন দিয়ে শোনা। এর মাধ্যমে যিনি আলোচনা করছেন, তার সম্মানের বহিঃপ্রকাশ হয়। এ জন্য উলামায়ে কেরাম বলেন, ইলমের প্রথম পাঠ হচ্ছে, মনোযোগ লাগিয়ে শোনা। আপনার সঙ্গে যিনি কথা বলছেন, আপনি হন তাঁর মনোযোগী শ্রোতা। আপনার সঙ্গী কথা বলছেন আর আপনি একবার এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন, কিংবা মোবাইল স্ক্রল করছেন। এটা কখনও আদর্শ শ্রোতার বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এ জন্য আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে কোরআন মনোযোগ লাগিয়ে শোনার কথা বলেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন কোরআন পড়া হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়।’ (সুরা আরাফ : ২০৪)।

পবিত্র কোরআনের বড় আদব হলো তেলাওয়াতের সময় কান লাগিয়ে নিশ্চুপ থাকা এবং এর হুকুম আহকামের ওপর আমল করার চেষ্টা করা।

যারা মনোযোগী শ্রোতা, তাদের প্রশংসা কোরআনে কারিমে এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা কথা শোনে মনোযোগ দিয়ে, অতঃপর তার মধ্যে যা কিছু উত্তম তার অনুসরণ করে, তারাই এমন লোক, যাদের আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন এবং তারাই বোধশক্তিসম্পন্ন।’ (সুরা জুমার : ১৮)।

তাই অন্যের কথার সময় নিশ্চুপ থাকাই শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। কোনো মন্তব্য থাকলে তার জন্য তাড়াহুড়া না করে অপেক্ষা করা। কথা পূর্ণ করার পর মন্তব্য করা। এর মাধ্যমে পরস্পর ভালোবাসা, ঘনিষ্ঠতা ও অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠবে।

দুই. কথা শোনার সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকা শোনার আদব। আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে নবী (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি পুণ্যের কোনো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’ (অর্থাৎ হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)। (মুসলিম : ২৬২৬)।

তিন. পারস্পরিক কথোপকথনের সময় কোনো গোপন কথা থাকলে তা কারও কাছে প্রকাশ না করা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী (সা.)-এর কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তাঁর পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মু সুলায়ম (রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাকেও বলিনি। (বোখারি : ৬২৮৯)।

আরেক বর্ণনায় এসেছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর মুখ ঘুরালে (কেউ শুনেছে কি না তা দেখলে) তা আমানতস্বরূপ। (আবু দাউদ : ৪৮৬৮)।

চার. পরনিন্দা গিবত-শিকায়াত না শোনা। যেভাবে আল্লাহতায়ালা কারও গিবত করা হারাম করেছেন, তেমনি অপরের গিবত, দোষ-ত্রুটি শোনাও হারাম করেছেন। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের মান-সম্মানের ওপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কেয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা তার মুখমণ্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। (তিরমিজি : ১৯৩১)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত