ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নামাজের আগে আজান

রায়হান রাশেদ
নামাজের আগে আজান

আজান আরবি শব্দ। এর অর্থ ডাকা বা আহ্বান জানানো। বিশেষ কিছু শব্দের মাধ্যমে নামাজের জন্য আহ্বান জানানোকে পরিভাষায় আজান বলা হয়। নামাজের জন্য আজান দেওয়া ইসলামি বিধানমতে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান আনসারি মাজিনি (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন- আবু সাইদ খুদরি (রা.) তাকে বললেন, ‘আমি দেখছি তুমি বকরি চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালোবাস। তাই তুমি যখন বকরি চরাতে থাকো বা বন-জঙ্গলে থাকো তখন উচ্চঃকণ্ঠে আজান দাও। কারণ জিন, ইনসান বা যেকোনো বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনবে, সে কেয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, এ কথা আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শুনেছি।’ (বোখারি : ৫৮২)।

সর্বপ্রথম কখন কোথায় আজানের সূচনা হয়- তা নিয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধতম ও বিশুদ্ধ মতামত হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে নববি নির্মাণের পর প্রথম হিজরিতে মদিনায় আজানের সূচনা হয়। (ইবনে খুজায়মা : ১/১৯০)।

আবু উমাইর ইবনে আনাস (রা.) তার এক আনসারি চাচা থেকে বর্ণনা করেন, নামাজের জন্য মানুষকে কীভাবে একত্র করা যায় এটা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) চিন্তিত ছিলেন। সাহাবিদের কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন, নামাজের সময় হলে একটা পতাকা উড়ানো হোক। তা দেখে একে অন্যকে নামাজের সংবাদ জানিয়ে দেবে। কিন্তু এটা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পছন্দ হলো না। কেউ কেউ প্রস্তাব করল, শিঙ্গাধ্বনি দেওয়া হোক। এটাও তাঁর পছন্দ হলো না। কারণ তা ছিল ইহুদিদের রীতি। কেউ কেউ ঘণ্টাধ্বনি ব্যবহারের প্রস্তাব করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ওটা নাসারাদের রীতি। উপস্থিত সাহাবিদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) নামে একজন সাহাবি ছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চিন্তার কথা মাথায় নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। অতঃপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) স্বপ্নে তাকে আজান শিখিয়ে দেওয়া হলো।

বর্ণনাকারী বলেন, পরদিন ভোরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বিষয়টি অবহিত করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমি কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক আগন্তুক এসে আমাকে আজান ও (ইকামত) শিখিয়ে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, একইভাবে ওমর (রা.)ও ২০ দিন আগেই স্বপ্নযোগে আজান শিখেছিলেন। কিন্তু তিনি কারও কাছে তা ব্যক্ত না করে গোপন রেখেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ স্বপ্নের বৃত্তান্ত বলার পর তিনিও তাঁর স্বপ্নের কথা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জানালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেন, তুমি আগে বললে না কেন? তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) এ বিষয়ে আমার আগেই বলে দিয়েছেন। এ জন্য আমি লজ্জিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরপর বললেন, বেলাল, ওঠো, এবং আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ তোমাকে যেভাবে নির্দেশ দেয়, সেভাবে তুমি করো। অতঃপর বেলাল (রা.) আজান দিলেন।’ (আবু দাউদ : ৪৯৮)।

আজানের শব্দাবলি : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মোট চারজন মুয়াজ্জিন ছিলেন। মদিনায় ছিলেন দুইজন। এক. বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.)। দুই. আমর ইবনে উম্মে মাকতুম কুরাশি (রা.)। আর কুবায় ছিলেন সাদ আলকুরজা (রা.)। এ ছাড়া মক্কায় ছিলেন আবু মাহজুরা আওস ইবনে বিন মুগিরা জুমাহি (রা.)। (জাদুল মাআদ : ১/১২৪)।

আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, বেলাল (রা.)-এর আজানের শব্দাবলি এমন-

আল্লাহু আকবার- ৪ বার। অর্থ- আল্লাহ মহান বা বড়।

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- ২ বার। অর্থ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই।

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ- ২ বার। অর্থ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।

হাইয়া আলাস সালাহ- ২ বার। অর্থ- নামাজের জন্য আসো।

হাইয়া আলাল ফালাহ- ২ বার। অর্থ- কল্যাণের দিকে আসো।

আল্লাহু আকবার- ২ বার। অর্থ- আল্লাহ মহান বা বড়।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- ১ বার। অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই। (আবু দাউদ : ১/৭১-৭২)

আবু মাহজুরা (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে আজান শিখিয়েছিলেন, তা এমন-

আল্লাহু আকবার- ৪ বার। অর্থ- আল্লাহ মহান বা বড়।

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- ২ বার। চুপে চুপে বা নিম্নস্বরে। অর্থ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাসক নেই।

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ- ২ বার। চুপে চুপে বা নিম্নস্বরে। অর্থ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।

আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- ২ বার। উঁচু আওয়াজে বা উচ্চঃস্বরে। অর্থ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই।

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ- ২ বার। উঁচু আওয়াজে বা উচ্চঃস্বরে অর্থ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।

হাইয়া আলাস সালাহ- ২ বার। অর্থ- নামাজের জন্য আসো।

হাইয়া আলাল ফালাহ- ২ বার। অর্থ- কল্যাণের দিকে আসো।

আল্লাহু আকবার- ২ বার। অর্থ- আল্লাহ মহান বা বড়।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- ১ বার। অর্থ- আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ বা ইলাহ নেই। (আবু দাউদ : ৪৯৯)।

উভয় পদ্ধতিতে ফজরের আজানে হাইয়া আলাল ফালাহ- ২ বার বলার পর আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম- ২ বার বলতে হবে। অর্থ- ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম। (বাইহাকি : ১/৪২৩)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত