
জমিদার নেই কিন্তু রয়ে গেছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি জমিদারবাড়ি। বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও অসাধারণ স্থাপনা আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে বালিয়াটি জমিদারবাড়ি অন্যতম।
জমিদারদের প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠান বালিয়াটি ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী উচ্চ বিদ্যালয়। বালিয়াটির জমিদার হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী কর্তৃক ১৯১৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি মোট ১৭.৪৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। শত বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বিদ্যালয়টি। মানিকগঞ্জের পুরাকীর্তির মধ্যে ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম।
বিদ্যালয়টির সামনে রয়েছে একটি বড় সবুজ ঘাসে ঢাকা খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে নানান ধরনের ফুলের চমৎকার একটি বাগান। জমিদারদেরে নির্মাণ করা একতলা স্কুল ভবনেই চলছে এখনও পাঠদান ও অফিসের কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ের সামনে টাইলসে বাধাই একটি কৃতজ্ঞতা স্মারক, তাতে একপাশে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা জমিদারের ছবি রয়েছে অন্যপাশে লেখা রয়েছে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। সেখানে লেখা রয়েছে, বালিয়াটির পূর্ববাড়ির (দশ আনির) মাঝার তরফের জমিদার ছিলেন প্রয়াত রায় বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী ছিলেন প্রধানত লবণ ব্যবসায়ী। তিনি একদিন ব্যবসার কাজে কলকাতা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় জমিদার পুত্র উপেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী পিতার নিকট একটি বিদ্যালয়ের নির্মাণের অনুরোধ করেন। জমিদার তার পুত্রের অনুরোধ অবজ্ঞা ও কটূক্তির স্বরে প্রত্যাখ্যান করেন।
পিতার এরূপ আচরণে অভিমানী পুত্র উপেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী নিজের বন্দুক দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। ছেলের আত্মহননে জমিদার রায় বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী কলকাতা যাওয়া বাতিল করে পুত্রের সর্বশেষ আবদার ও স্মৃতি রক্ষার্থে প্রয়াত পিতা ঈশ্বর চন্দ্র রায় চৌধুরীর নামে ১৬ই জানুয়ারি ১৯১৯ সালে ১৭.৪৭ একর জমির উপর ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
বালিয়াটি ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাধুরী শিকদার জানায়, আমার কাছে বিষয়টি অনেক গর্বের ও আনন্দে যে আমরা ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়ে লেখা পরা করছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক ভালোভাবে পড়াশুনা করায়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পার করছে, বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনা করতে পেরে গর্ববোধ করি।
জমজ দুই ভাই রাকিব ও রাতুল ৮ম শ্রেণিতে কয়েকদিন আগে ভর্তি হয়েছে এ বিদ্যালয়টিতে তারা জানায়, ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়টি একটি ঐতিহ্যবাহী স্কুল। বিদ্যালয়ের পরিবেশ অনেক সুন্দর। আমরা আগে অন্য স্কুলে পড়াশুনা করতাম, এখন জমিদারদের তৈরি করা স্কুলে পড়াশুনা করছি এতো পুরাতন এ স্কুলে পরতে ভালোই লাগে।
ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আছালত জামান খান জানান- বালিয়াটি ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়টি একটি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে দীর্ঘ দিন বিদ্যালয়টিতে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করানো হতো। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে এটিতে বাংলা মাধ্যমে পাঠদান শুরু হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন টেবিল, চেয়ার আলমারিসহ বিভিন্ন আসবাপত্র এখনও বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত রয়েছে যা আমরা এখনও ব্যবহার করি। আমি নিজেও এ বিদ্যালয়টির ছাত্র ছিলাম বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি এ জন্য আমি নিজে গর্ববোধ করি।