ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

অদম্য মেধাবী মিথুনের ডুয়েটে ভর্তি অনিশ্চিত!

অদম্য মেধাবী মিথুনের ডুয়েটে ভর্তি অনিশ্চিত!

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েটে) এ অদম্য মেধাবী মিথুন রায়ের ভর্তি অনিশ্চিত। তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের কুরুল গ্রামের দিনমজুর মিলন চন্দ্র ও প্রভাতি রাণী দম্পতির ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিজের জায়গা জমি না থাকায় অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে দিনমজুরি আয়ে চলে মিলন চন্দ্রের ৫ সদস্যের সংসার। অভাব আর অনাটনের মাঝেও সন্তানদের লেখাপড়ায় বেশ আগ্রহী দিনমজুর মিলন চন্দ্র। ১ ছেলে ও ২ মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বড় ছেলে মিথুন রায় অত্যন্ত মেধাবী। দারিদ্রতার কশাঘাতে জর্জরিত সংসার থেকে খেয়ে না খেয়ে ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগিয়েছেন মিলন চন্দ্র। বড় ছেলে মিথুন রায় ইটাপোতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০২০ সালে জিপিএ-৪.৭২ নিয়ে এসএসসি পাশ করে পরে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলে কলেজের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে একটি মুদির দোকানের কর্মচারী ও প্রাইভেট পড়ায়ে নিজের খরচ চালান মিথুন রায়। ৪ বছর খেয়ে না খেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে ২০২৪ সালে ৩.৮৭ পেয়ে ডিপ্লোমা পাশ করে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়।

নিজেকে দক্ষ প্রকৌশলী করতে ঢাকা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ভর্তির আবেদন করে মিথুন রায়। মুদির দোকানে কর্মচারীর কাজের ফাঁকে পড়ালেখা করে ডুয়েটের ভর্তি যুদ্ধে অংশ নেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমে মিথুন রায় ডুয়েটে বিএসসি পড়তে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। সুযোগ আসে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছাবার। কিন্তু সু-খবরের মাঝে আর্থিক সংকটের দুঃশ্চিন্তা এসে দাঁড়ায়। সুযোগ পেয়েও ডুয়েটে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার।

ডুয়েটে ভর্তি হতে আগামী সোমবার এরমধ্যে ভর্তি ফি ১০,০০০/- টাকা, বই-খাতা থাকা খাওয়াসহ অনুষঙ্গিক মিলে গুণতে হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। যা তার পরিবারের সাধ্যের বাইরে। ডুয়েটে ভর্তির জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত আবেদনও করেছেন মিথুন রায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলে নি। অন্যদিকে ভর্তির দিন ঘনিয়ে আসছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন মাঝ পথে ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত টাকার কোনে ব্যবস্থা হয় নি। ইটোপোতা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, মিথুন আমার প্রতিবেশী ও আমার ছাত্র। সে অত্যন্ত মেধাবী। তাকে সহায়তা করলে সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। মিথুন রায়ের মা প্রভাতি রাণী বলেন, ‘হামার মিথুন না কি ইঞ্জিনিয়ার হইবে। সেই জন্য মাইনসের (অন্যের) বাড়িতে ঝিয়ে কাজ করে টাকা দিয়েছি। এলা না কি ঢাকায় ভর্তি হতে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাগে। হামরা গরিব মানুষ এতো টাকা কোনটে পাই। কায়ো কি আছে মোর বেটাক টাকা দিয়ে পড়াইবে? দিলে ভগবানের কাছে তার জন্য আর্শীবাদ করমো।’ মিথুনের বাবা মিলন চন্দ্র বলেন, ‘খেয়ে না খেয়ে টাকা দিয়েছি মিথুন পড়ালেখা করেছে। তার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু গরিব মানুষ তাকে এতো টাকা কেমনে দেই। কোথায় পাবো এতো টাকা। কেউ সাহায্য করলে মিথুন বড় ইঞ্জিনিয়ার হইতো।’ তাই বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানান তিনি। মিথুন রায় বলেন, ‘স্কুল জীবন থেকে স্বপ্ন দেখছি প্রকৌশলী হয়ে দেশের জন্য কাজ করবো।

সেই স্বপ্ন পূরণ করতে বার বার প্রতিবন্ধকতা হয়েছে অভাব নামক দানব। তবে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ডুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এখন আর পারছি না। একই সঙ্গে এতো টাকা দেওয়া আমার পরিবারের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। মাঝ পথে স্বপ্নের অপমৃত্যুও মেনে নিতে পারছি না। তাই সমাজের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করছি।’

১নং মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আসাদুল হক মন্টু বলেন, মিথুন গরীব হলেও অত্যন্ত মেধাবী। তাকে সহায়তা করলে সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। তার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা কামনা করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত