
সরকারি খরচে নির্মিত ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালাচর রেলপথ এখন আর্থিকভাবে একটি অকার্যকর প্রকল্পে রূপ নিয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয় ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর রেলপথ। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে ঢালারচর পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। শুরুতে রেলপথটির নির্মাণব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৯৮৩ কোটি টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১০ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। তবে নির্মাণকাজের দীর্ঘসূত্রতার কারণে একাধিকবার মেয়াদ ও ব্যয় সংশোধন করা হয়। প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি নির্মাণে খরচ হয় ১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে রেলপথটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এ পথে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২০ সালে। তখন থেকে এক জোড়া ট্রেন চলছে এ রেলপথে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথের ১১টি স্টেশন থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে আয় হচ্ছে মাত্র ১৫ লাখ টাকা।
তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেলপথ ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনায় যুক্ত কর্মীদের বেতন-ভাতা এবং ট্রেনের জ্বালানি খরচ বিবেচনায় নিলে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব অর্জিত হচ্ছে না। উল্টো ট্রেন পরিচালনা করে লোকসান হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তারা। এ রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য জনবলের সংস্থান রাখা হয়েছে ১ হাজার ১২১ জনের। বিভিন্ন গ্রেডের এ কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে বছরে দরকার হয় ৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন বাবদ প্রয়োজন সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তবে যত জনবলের সংস্থান রাখা হয়েছে, বাস্তবে নিয়োগকৃত জনবল রয়েছে হাতেগোনা। এ রেলপথে বর্তমানে মাত্র ৬৫ জন কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে তিনজন স্টেশনমাস্টার, তিনজন পয়েন্টসম্যান, ৩০ জন গেটম্যান, ১৫ জন পোর্টার নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের অপারেশন শাখার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ প্রকল্পটি গ্রহণের সময় বলা হয়েছিল চালুর পর প্রতিদিন এ পথে ১০টি ট্রেন চলবে। কিন্তু রেলপথটি চালুর ছয় বছর হতে চললেও একটির বেশি ট্রেন চলাচল করছে না। ট্রেনটির (ঢালারচর এক্সপ্রেস) জ্বালানি ব্যয় ও রানিং স্টাফদের বেতন-ভাতা বাবদ আয়ের একটি বড় অংশ চলে যায়। এ রেলপথ থেকে রাজস্ব আয় সামান্যই। স্থানীয় কিছু মানুষের যোগাযোগে সুবিধা হওয়া ছাড়া ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথটি দেশের অর্থনীতিতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘?প্রকল্পটি কেউ একজন নিয়ে গেছে ঢালারচরে। সেখানে রেলপথ নির্মাণ করলে কী লাভ হবে, কী সুবিধা হবে সেই বিষয়টা তারা বিবেচনা করেনি। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয় উপেক্ষিত থাকতো। তিনি আরও বলেন, ‘?ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে ইন্টিগ্রেটেড মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করছি। এ মহাপরিকল্পনায় দেশের কোথায় কী ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন তা নিরূপণ করা হচ্ছে। কোথায় সড়ক দরকার, কোথায় রেল দরকার, কোথায় নৌপথ তৈরি করা দরকার সেটা এই মহাপরিকল্পনায় উল্লেখ থাকবে।’ ভবিষ্যতে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে এ মহাপরিকল্পনা অনুসরণ করলে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথের মতো প্রকল্পের পুনরাবৃত্তি।