
বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কুমিল্লার মুরাদনগরে জমে উঠেছে মাছ ধরার ঐতিহ্যবাহী ‘আনতা’র হাট। উপজেলার রামচন্দ্রপুর, দক্ষিণ বাঙ্গরা এবং মালাই বাঙ্গরাসহ বিভিন্ন বাজারে এখন শুধুই বাঁশের তৈরি এই ফাঁদ বিক্রির ধুম। এটি শুধুমাত্র একটি পণ্য নয়, বরং গ্রাম বাংলার মাছ ধরার এক ঐতিহাসিক কৌশল, যা এ সময়ে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে।
ঐতিহ্যবাহী রামচন্দ্রপুর ও দক্ষিণ বাঙ্গরা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, আকার ও মানভেদে প্রতিটি আনতা ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বর্ষার শেষ দিকে এসে আনতার চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে ব্যবসায়ীরা এই মৌসুমে ভালো লাভের আশা করছেন।
আনতা ব্যবসায়ী কবির হোসেন জানান, এই মৌসুমে প্রতি হাটে তিনি ৬০ থেকে ৭০টি আনতা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আমার কাছে এসে আনতা কিনে নিয়ে যায়। এই সময়ে ছোট ছোট মাছগুলো পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে নামতে শুরু করে, আর তখন জমির আইলে আনতা পুঁতে রাখলে মাছগুলো সহজেই ধরা পড়ে। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই খুশি।
আরেক মাছ বিক্রেতা মতিন মিয়া জানান, তিনি প্রতি মৌসুমে ৫ থেকে ৬টি আনতা কেনেন। তিনি বলেন, আনতা দিয়ে প্রতিদিন ২-৩ কেজি মাছ পাই, যা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
আনতা শুধু ফাঁদ নয়, জীবিকার উৎস, আনতা শুধু মাছ ধরার একটি মাধ্যম নয়, এটি শত শত মানুষের জীবিকারও উৎস। একদিকে যেমন আনতা তৈরি ও বিক্রি করে অনেক পরিবার নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে, তেমনই এর সাহায্যে ধরা মাছ বিক্রি করে বহু মানুষ বাড়তি আয় করে। এই দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ ধরার আনন্দে মেতে ওঠে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষ, যা মুরাদনগরের গ্রামীণ জীবনকে আরও রঙিন করে তোলে।