ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প

হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প

এক সময়ের গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বাস বেত দিয়ে তৈরি খালই, (স্থানীয় ভাষায় এটাকে খাড়ই বলা হয়) ডালা-চালন, কুলা ও সাজি। মাছ চাষ, সংরক্ষণ ও খাবারের জন্য মাছ রাখার খালই, ধানের কাজের জন্য ব্যবহৃত ডালা চালন কুলা ও সাজি। এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিটি আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। আধুনিক জীবনের ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার অনেক প্রাচীন উপকরণ, যন্ত্রপাতি কিংবা কৌশল যেমন বিলুপ্ত হচ্ছে, তেমনি গ্রামীণ মৎস্য চাষ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। এগুলো আজ অতীতের স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। এগুলি তৈরি হয় সাধারণত বাঁশ, তালগাছের কাণ্ড, কাঠ বা পাটখড়ি দিয়ে। এর গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র বা ফাঁক থাকে। আগেকার দিনে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ডালা, চালন, সাজিও কূলা ছিল না এমন কোন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যেত না। আজ এগুলি গ্রামের পরিবারগুলোতে শুধুই স্মৃতি। বাস, বেদ দিয়ে তৈরি করা শিল্পোর কারিগরদের দক্ষিণ অঞ্চলের গ্রামের ভাষায় বলা হত পাদুয়া। এর নাম পরিবর্তন হয়ে এখন হয়েছে বাঁশ বেতের শিল্প। বাঁশ বেদ দিয়ে তৈরি করা মাল পাথরঘাটা শহরে বিক্রি করতে আনা সুকান্ত বাবু বলেন, এখন আর এ শিল্পর কোন মর্যাদা নেই। এগুলো বিক্রি করতে আনলে সারাদিন বসে এক হাজার টাকাও বিক্রি করা যায় না। বাস এবং বেদ দিয়ে তৈরি করে বিক্রি করতে আনা অন্য ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক মুন্সী জানান, আগেকার সময় গ্রামের অনেক বাড়িতেই এগুলি তৈরি করত কিন্তু এখন আর এগুলোর ব্যবহার ও তৈরি করা মানুষও কমে গেছে। এখন আর এগুলো খুব একটা মানুষ তৈরি করে না। এত বড় শহরে আমরা দুজন লোক এগুলো বিক্রি করতে আনি। তাও তেমন মানুষ কিনছে না। গ্রামের মানুষ এগুলো না কিনতে কিনতে একসময় এই শিল্প হারিয়ে যাবে।

স্থানীয় কারিগররা এগুলো তৈরি করে বিক্রি করতেন, এবং অনেকের জীবিকার অংশ ছিল এটি। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। প্লাস্টিক, স্টিল কিংবা এসএস, এসব আধুনিক উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ আর এগুলো ব্যবহার করে না। বাঁশ ও বেতের সঙ্কট, পেশাগুলোর প্রতি অবহেলা, সব মিলিয়ে এই শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। পাথরঘাটায় মানবিক কর্মী মেহেদী শিকদার বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটাকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। গ্রামীণ মেলা, স্কুল-কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম কিংবা বিভিন্ন প্রদর্শনীতে এগুলি তুলে ধরতে হবে। স্থানীয় কারিগরদের পুনরায় উৎসাহ দিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কারণ এগুলো আমাদের গ্রামের মানুষের শেকড়, আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। জীবিকার ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী যাকে রক্ষা করা আমাদের সাংস্কৃতিক দায়িত্ব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত