
বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পূনবহালের দাবিতে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ব্যানারে গত রবিবার সকাল সন্ধ্যা হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত সময় গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকেই হরতাল শুরু হয়। হরতালের সমর্থনে গোটা জেলা জুড়ে সড়ক-মহাসড়কে কোথাও ট্রাক রেখে কোথাও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করেছেন নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে সকাল আটটার দিকে জেলা নির্বাচন অফিস ও বেলা পৌনে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় হরতাল পালন কারিরা।
জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসানকে তার নিজ কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয় হারতালকারীরা। পরে তিনি ত্রাণ, দুর্যোগ ও পুনবাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের দিকে চলে যান। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. মো. ফকরুল হাসানের গাড়ির সামনে বাঁধা সৃষ্টি করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের সম্মান দেখিয়ে তিনি হেটে নিজ কার্যালয়ে যান। এদিকে হরতাল নিশ্চিত করতে জেলার খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের কাটাখালি, নওয়াপাড়া, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, আবুল খায়ের সেতু, বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে, কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, মাজার মোড়, সিএন্ডবি, কচুয়ার সাইনবোর্ড, বাধালসহ অন্তত ৫০টি স্থানে গাছের গুড়ি, বাশ অথবা ট্রাক দিয়ে বাধা সৃষ্টি করা হয়। যার ফলে জেলা থেকে কোনো গনপরিবহন ছেড়ে যায়নি কোথাও। এর সঙ্গে চারটি আসনের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে জেলাজুড়ে সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়েছে। স্বতস্ফূর্তভাবে জেলার জনগণ এই হরতাল পালন করেছে বলে দাবি রাজনৈতিক নেত্রীদের।
তবে জরুরি প্রয়োজনে যারা বেরিয়ে ছিলেন সেই সব মানুষেরা পথে পথে নানা ভোগান্তিসহ বাড়তি ভাড়া । প্রচণ্ড গরমে নারী শিশুরাও চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। ফররুখ আহেমদ নামের এক ব্যক্তি বলেন জরুরি প্রয়োজনে শরণখোলা থেকে আদালতে এসেছিলাম। ৪০০ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। কারণ বাস চলেনি, আবার ইজিবাইক ও ভ্যান যা চলেছে, তাও সীমিত এজন্য ভাড়া বেশি দিতে হয়েছে। এদিকে হরতালের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দরের কোনো পণ্য সড়ক পথে পরিবহন হয়নি। তবে বন্দরের অভ্যন্তরে জাহাজে পণ্য খালাস ও বোঝাই চালু ছিল। নদী পতে সব ধরনের যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল বলে জানান মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ বিভাগের উপ-সচিব মাকরুজ্জামান মুন্সি।
তবে সারা দিনের হরতালে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আন্দোলন কারিরা বলছেন তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও আইনি প্রক্রিয়ায় ৪টি আসন ফিরে পাবেন। তবে এতেও যদি নির্বাচন কমিশনের টনক না নড়ে তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষনা দেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালাম ও জেলা জামায়াতের আমির মাও. রেজাউল করিমের। তারা বলেছেন, আমরা আজকে হরতাল করেছি। আগামী কাল মিছিল করা হবে। নির্বাচন অফিসগুলো তালা লাগানো হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার আবারও ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করা হবে। এরপরেও যদি নির্বাচন কমিশন তার জায়গা থেকে সরে না আসে, তাহলে আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব।
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি আসন ছিল। গত ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি অংশ কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটের নেতাকর্মীরা। তার বিপরীতে গেল ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসনই জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এরপরই ফযুসে ওঠে বাগেরহাটবাসী।
নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত সীমানার গেজেট অনুযায়ী বর্তমান আসনের সীমানা : বাগেরহাট-১ (বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট)। বাগেরহাট-২ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) ও বাগেরহাট-৩ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা)। ১৯৬৯ সাল থেকে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল।
তখনকার সীমানা : বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।